ধর্ষণের শিকার, তাই শিশুকে বের করে দিল মাদরাসা কর্তৃপক্ষ
প্রকাশিত: ১৭:০৫ ২২ জানুয়ারি ২০২২ আপডেট: ১৭:০৬ ২২ জানুয়ারি ২০২২

ছবি প্রতীকী
ধর্ষণের শিকার হওয়া আট বছরের এক শিশুর ভর্তি বাতিল করে তাকে মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ফেরত দেওয়া হয়েছে ভর্তি ও আবাসিকের জন্য জমা দেওয়া টাকাও।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলছে অন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আপত্তি জানানোয় শিশুটির ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। রাজশাহীর নগরীর হড়গ্রাম মুন্সিপাড়া এলাকার এক আবাসিক মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী শিশুর মা জানান, ১০ দিন আগে নগরীর উম্মাহাতুল মু’মিনীন মহিলা মাদরাসায় তার মেয়েকে ভর্তি করা হয়েছিল। বেসরকারি এই মাদরাসাটিতে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকায় তারা ভেবেছিলেন, এখানে ভর্তি করলে তার সন্তান নিরাপদে থাকবে। তবে তিন দিন পরই তাকে মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ফেরত দেওয়া হয়েছে ভর্তি ও আবাসিকের জন্য জমা দেওয়া টাকাও।
শিশুটির মা বলেন, ভর্তির তিন দিন পর আমার মেয়েকে মাদরাসা গেটের বাইরে বের করে গেট লাগিয়ে দেয়। মেয়েটা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে তখন কাঁদছিল। পরে পরিচালক আমাকে ডাকল। আমাকে বলল- ‘আপনার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও ভর্তি করেন।’ আমি বললাম, আমার মেয়ের কোনো সমস্যা? তখন বললেন, ‘না, দূরে কোথাও ভর্তি করেন।’ আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, আপনার মেয়ের সঙ্গে যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে আপনি কি করবেন? তখন কোন কথা বলছে না সে (মাদরাসা পরিচালক)। আমাকে টাকাটা ফেরত দিয়ে মেয়েকে বের করে দিল। আমার মেয়ের কোন সমস্যা দেখাতে পারছে না, খালি বলছে- ‘দূরে কোথাও ভর্তি করেন।’
আরো পড়ুন: ওষুধের আড়ালে ‘গরিবের ইয়াবা’ বিক্রি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘মেয়েটার ব্যাপারে অন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা এসে অভিযোগ করে আমাকে বলেছিল যে, তার সমস্যা আছে। আমি নাকি যাকে তাকে ভর্তি নিয়ে নিচ্ছি। অভিভাবকদের আপত্তি থাকায় এই মেয়েটার ভর্তি বাতিল করতে হয়েছে। টাকাও ফেরত দেওয়া হয়েছে।’
ঐ শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। নিজের কোনো ভিটেমাটি নেই। রেলের জমির বস্তিতে একটি ঘর করে বসবাস করেন। এক সড়ক দুর্ঘটনায় শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেলেও শিশুটির বাবা এখন অটোরিকশা চালান। একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়া হিসেবে চাকরি করেন শিশুর মা।
আরো পড়ুন: ১৮ দিনেও সন্ধান মেলেনি তানজিলার
২০২০ সালের ২১ মার্চ ঐ শিশুর মা ছিলেন হাসপাতালে। শিশুর বাবা অটোরিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। ঐ সময় প্রতিবেশী এক কিশোর বাড়িতে গিয়ে শিশুটির কাছে দিয়াশলাই চায়। শিশুটি দিয়াশলাই দিলে কিশোর সেটি নিয়ে হাঁটা ধরে। দিয়াশলাইয়ের জন্য শিশুও পিছু নেয়। তখন বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে শিশুটিকে ধর্ষণ করে ঐ কিশোর। ধারণ করা হয় ভিডিও। ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ কিশোরকে আটক করে। জব্দ করা হয় মুঠোফোন। পরে এ ঘটনায় ঐ বছরের ২২ মার্চ মামলা করা হয়। ঐ মামলায় ওই কিশোর এখন কারাগারে।
মামলার বিষয়ে নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘শিশুটার মায়ের করা মামলাটা তদন্তাধীন আছে। তদন্ত চলাকালে বেশি কিছু বলব না। তবে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন ডিএনএ টেস্ট করা হবে। তারপর অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। ডিএনএ টেস্ট না হওয়ায় অভিযোগপত্র দেওয়া যাচ্ছে না।’
ডেইলি বাংলাদেশ/আরএডি