ইউক্রেন সংকট
পশ্চিমা বিশ্বকে আতঙ্ক না ছড়ানোর আহ্বান জেলেনস্কির
প্রকাশিত: ১১:৪১ ২৯ জানুয়ারি ২০২২

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা বাড়ছেই পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে। সীমান্তে লাখের বেশি রুশ সেনা অবস্থানের জবাবে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো শুরু করেছে বাইডেন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আশঙ্কা, আগামী মাসেই ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে পারে রাশিয়া। যদিও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনেস্কি। রুশপন্থি এই প্রেসিডেন্ট পশ্চিমাদের আহ্বান জানান, সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে তারা যেন কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি না করে। বলেন, আক্রান্ত হলে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়বে ইউক্রেন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর যে অভিযোগ তুলেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, তা অমূলক। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ শুক্রবার এ কথা জানান।
আরো পড়ুন: ইউক্রেন উত্তেজনায় গ্যাস সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগে ইউরোপ
সীমান্তে রুশ সেনা জমায়েতের বিষয়ে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলনেস্কি বলেন, গত বসন্ত থেকে রাশিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন শুরু করে। তবে এটাকে ইউক্রেনের জন্য হুমকি ভাবছি না। পশ্চিমারা আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, দেশের সম্মানিত ব্যক্তিরাও বলছেন যে আগামীকাল থেকেই যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। এ ধরনের খবর আতঙ্কের। যদি যুদ্ধ বাধে তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে?
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সমালোচনা করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে নিয়ে ভুল করেছে তারা। আসলে দেশের ভেতরের অস্থিরতাই ইউক্রেনের বড় হুমকি। ২০১৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। দখলে নেয় ক্রিমিয়া উপত্যকার।
এ নিয়ে ইউক্রেনের তৎকালীন সরকারের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পরে রুশপন্থী ইউক্রেনীয় বিদ্রোহীরা। এতে কমপক্ষে ১৪ হাজার মানুষ নিহত হন। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান অন্তত ২০ লাখ নাগরিক। ২০১৫ সালে সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি কার্যকর হলে, পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
তবে সম্প্রতি উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হলে সীমান্তে সেনা জড়ো করা শুরু করে মস্কো।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের দাবি, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেয়া তার দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। কিয়েভকে এই অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানান ভ্লাদিমির পুতিন।
আরো পড়ুন: বিশ্বে করোনায় সংক্রমণ কিছু কমলেও বেড়েছে মৃত্যু
তবে পুতিনের দাবি আমলে নিচ্ছে না ওয়াশিংটন। তারা বলছে, কূটনৈতিক উপায়ে এ ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ আছে।
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার এমন অবস্থানের মধ্যে ফোনে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর। ফোনালাপে পুতিন বলেন, ‘সবকিছু পর্যবেক্ষণে রাখছে ক্রেমলিন। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
পরে এলিসি প্রাসাদ থেকে জানানো হয়, উত্তেজনা কমাতে রাজি আছেন পুতিন- বাইডেন দুজনই। প্রতিবেশী দেশের প্রতি সম্মান দেখাতেও মস্কোকে পরামর্শ দিয়েছে প্যারিস।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন শুক্রবার জানান, ইউক্রেন আক্রমণে প্রস্তুত তারা। আমেরিকা ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে। তবে যুদ্ধ অনাকাঙ্ক্ষিত। কূটনৈতিকভাবে সমাধানের সুযোগ আছে।
জার্মান গোয়েন্দারা বলছেন, ইউক্রেন আক্রমণের জন্য প্রস্তত ছিল রাশিয়া। তবে কখন হামলা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।
অন্যদিকে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের জোটও পূর্ব ইউরোপে সেনা উপস্থিতি বাড়াতে প্রস্তুত ছিল।
ডেইলি বাংলাদেশ/আরএএইচ