তিনাপ সাইতার: মৃত্যুময় সৌন্দর্যের পথে
প্রকাশিত: ১৬:১৫ ১৪ মে ২০২২

তিনাপ সাইতার। ছবি: সংগৃহীত
‘না চাহিলে যারে পাওয়া যায়’—তিনাপ সাইতার তেমন কোনো ঝরনা নয়। প্রকৃতি এমনিতেই তার শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্যগুলো দুর্গমতা, বিপদ, শ্বাপদ আর মৃত্যুর ঝুঁকির চাদরে যত্নে ঢেকে রাখে। যে সেসব হেলায় উপেক্ষা করতে পারে—প্রকৃতি তার সবটুকু রূপ- রস- গন্ধ সমেত শুধু তার কাছেই ধরা দেয়। এ এক আশ্চর্য রহস্যময়ী!
‘তিনাপ সাইতার’- তেমনই এক রহস্যের নাম- প্রতি পদে অলঙ্ঘনীয় দুর্গমতা, শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষা নেয়া এই ঝরনাটি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। মনে রাখা ভালো, তিনাপ সাইতার দেখতে হলে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে আবার একই পথে ফিরে আসতে হয়।
বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত তিনাপ সাইতার অনেকের কাছে পাইন্দু সাইতার নাম পরিচিত। হার্ড ট্রেকিংয়ের জন্য উপযুক্ত একটি আদর্শ জায়গা। ধৈর্য্য আর শারীরিক সামর্থ্য থাকলেই কেবল তিনাপ সাইতাররের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
তিনাপ সাইতার গঠনের দিক থেকে এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পানি পতনের স্থানজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল সব পাথর খণ্ড। হয়তো প্রাগৈতিহাসিক কোনো কালে এ জলপথ জুড়ে ছিল তারাই। কোনো ভূকম্পনে ভূমিচ্যুত হয়ে তারা এখন মূল পথ থেকে সরে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে অনন্য সাধারণ এ ঝরনাধারার।
বান্দরবান থেকে তিনাপ সাইতার দেখতে যাওয়ার দুটি রাস্তা আছে। একটি রাস্তা তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত ও সহজ- বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে জিপ ভাড়া করে আত্ত্যাহপাড়া; তার পর দুই ঘণ্টার ট্রেকিং শেষে তিনাপ সাইতার। এ পথে একদিনেই তিনাপ ঘুরে আসা সম্ভব-সহজ কিন্তু রোমাঞ্চহীন। আরেকটি রাস্তা বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে শুরু। ওখান থেকে ৭-৮ ঘণ্টার ট্রেকিং শেষে রনিন পাড়া নামের একটি গ্রাম পড়বে। ওখানে এক রাত থেকে ভোরে উঠে আবার ৪-৫ ঘণ্টা ট্রেক করার পর তবে দেখা মিলবে তিনাপ সাইতারের। দ্বিতীয় পথটা অত্যন্ত দুর্গম, দীর্ঘ, বিপদ সংকুল তবে পাইন্দু খাল আর তিনাপের মূল সৌন্দর্যকে উন্মোচন করতে চাইলে হাঁটতে হবে ৪৮ কিমির এই পুরোটা পথ- বিশাল উঁচু পাহাড়, গভীর গিরিখাত, পিছল পাথর আর খরস্রোতের পাহাড়ি ঝিরি বেয়ে!
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অন্যান্য দর্শনীয় জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে তিনাপ সাইতার অনেকটাই ভিন্ন। সব মৌসুমেই এ ঝরনার পানি স্বচ্ছ এবং ঠান্ডা-গরম থাকে। এ পাহাড় থেকে ওই পাহাড়ে আঁকাবাঁকা পথে ১৫০ ফুট উঁচু থেকে এ ঝরনার পানি পড়ে পাইন্দু খালে। সেখানে একেবারেই স্বচ্ছ পানিতে আপনি খালের তলদেশ পর্যন্ত দেখতে পারবেন।
সকালে সূর্যের আলো প্রথম যখন খালের পানিতে পড়ে; তখন রংধনুর সৃষ্টি হয়। পর্যটকরা এ দৃশ্য দেখতে উদগ্রীব হয়ে থাকেন। মনোরোম তিনাপ সাইতার যদিও দুর্গম এলাকায়; তবুও পর্যটকরা নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমায় সেখানে। খাড়া পাহাড় থেকে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে প্রথমে বান্দরবান পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে বাসে করে রুমা যেতে হবে। ঘণ্টাতিনেক সময় লাগবে। রুমাতে নেমে আর্মি স্টেশনে নাম নিবন্ধন করে গাইড ভাড়া করে চান্দের গাড়িতে আট্টাহ পাড়া পৌঁছানো যাবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে তিনাপ সাইতার। শুষ্ক মৌসুমে রুমার রাস্তাটি বেশি সহজ সময়ও অনেকটা কম লাগে।
ডেইলি বাংলাদেশ/এনকে