২৫৯ টাকায় সফল উদ্যোক্তা
প্রকাশিত: ২১:৩৩ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ আপডেট: ১০:১৩ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ঈশিতা আক্তার তানিয়া
২০১৮ সালের নভেম্বর মাস। খুব বিষণ্নতায় ভুগছিলাম। বিষণ্নতা দূর করতে কিছু করা প্রয়োজন। তবে কী করব ভাবছিলাম, হঠাৎ উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা জাগল। কিন্তু মাসের শেষে হাতে তেমন টাকাও নেই। তবু থেমে থাকিনি। নিজের কাছে থাকা ২৫৯ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। সেই থেকেই শুরু উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প।
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঈশিতা আক্তার তানিয়া। সফল এ উদ্যোক্তা বর্তমানে ঢাকার বেইলি রোডে থাকলেও জন্ম বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের নানাবাড়িতে। সেখানেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেন। এরপর ঢাকায় এসে উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে ইংরেজিতে স্নাতক শেষ করেন।
কাঠের টুকরো দিয়েই ঈশিতা কাজ শুরু করেন। বাজার থেকে কাঠের টুকরো কিনে এনে নিজের হাতে বানান কানের দুল, নাকফুল, আংটি, লকেট, টিপসহ বাহারি ডিজাইনের গয়না। আর কাঠের বেইজের ওপর রং তুলিতে এঁকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলেন এসব গয়না। এতেই ভিন্নতার স্বাদ পান তিনি। শুরুটা কাঠের টুকরো দিয়ে হলেও বর্তমানে তিনি শাড়ি-পাঞ্জাবি নিয়েও কাজ করছেন। শাড়ি-পাঞ্জাবিতেও আঁকছেন নিজের আলতো হাতে।
ঈশিতা অনলাইনেই কাজ করেন। তার ফেসবুক পেজটির নাম ‘Ishraf style zone’। পেজে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন তিনি। তবে ভবিষ্যতে অফলাইনে কাজ করার চিন্তা রয়েছে সফল এ উদ্যোক্তার।
ঈশিতা আক্তার তানিয়া বলেন, ২০১৮ সালের শেষে অর্থাৎ নভেম্বরের দিকে নিজেকে খুবই একাকী ভাবতাম। বিষণ্নতা নিয়েই দিন কাটতো। ভাবতে শুরু করি নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আর সেই ভাবনা থেকেই মাসের শেষ সপ্তাহে মাথায় আইডিয়া আসে বাজার থেকে কিছু কাঠের টুকরো কিনে আনব। তখন আমি উত্তরায় থাকতাম। মা-বাবার কাছেও টাকা চাইনি। নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে ২৫৯ টাকা পাই। সেই টাকা নিয়ে বাজারে গেলাম। কিন্তু কোনো দোকানেই কাঠ পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ এক দোকানে কাঠের টুকরো চোখে পড়ে। এরপর কাঠ কিনে বাসায় আসি।
কাঠের কাজ কেন বেছে নিলেন- জবাবে ঈশিতা বলেন, এ কাজটি নেয়ার কারণ হলো- এর সঙ্গে মিশে আছে দেশীয় ঐতিহ্য। এছাড়া এটি ইউনিক একটি কাজ। কষ্ট হলেও কাঠের টুকরোয় আমার অনেক স্মৃতি জড়িত। অন্যসব পণ্য নিয়ে কাজ করলেও কাঠের গয়না থাকবেই।
কাজ করতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরুতে আত্মীয়-স্বজনসহ বন্ধুরা হাসাহাসি করতেন। কারণ ইংরেজিতে লেখাপড়া, বিসিএস প্রিলি টিকেও এসব কাঠ বেচাকেনা করছি। বিষয়টি অনেকেই স্বাভাবিকভাবে দেখতেন না। তবে মা-বাবা শুরু থেকেই আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। আশপাশের মানুষের কথা শুনে মাঝেমধ্যে তাদেরও কষ্ট হতো। তখন আমি সামলে নিতাম।
গ্রাহকের কেমন সাড়া পাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে সফল এ উদ্যোক্তা বলেন, শুরুতে গ্রাহক জোগাতে খুব কষ্ট করতে হয়েছে। ফেসবুক পেজে পোস্ট করলেও তেমন সাড়া পেতাম না। তবে এখন আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে করোনার সময় আমার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে।
ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন- জবাবে তিনি আরো বলেন, যেহেতু ডিজাইনার হওয়া ছোটবেলারই ইচ্ছে। সেহেতু একজন প্রতিষ্ঠিত গয়না ও পোশাক ডিজাইনার হতে চাই। হাতে তৈরি হলেও প্রতিটি গ্রাহকের কাছেই সবচেয়ে ভালো জিনিসটিই সবসময় পৌঁছে দিতে চাই।
ডেইলি বাংলাদেশ/এমআর/আরএইচ