বিশ্বের প্রথম সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী মসজিদ, যার আলোয় আলোকিত পুরো গ্রাম
প্রকাশিত: ১২:৩৯ ১৭ জানুয়ারি ২০২১ আপডেট: ১২:৫১ ১৭ জানুয়ারি ২০২১

ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বে এমন অনেক জনপদ বা গ্রাম আছে যেগুলো নগর সভ্যতা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করছে। এর মূল কারণ সেই গ্রামগুলোতে পৌঁছানোর রাস্তা এতই দুর্গম যে, সেখানকার অধিবাসীরা চাইলেও নিয়মিতভাবে মূল অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে না।
বেশিরভাগ সময় দেখা গিয়েছে এরকম দুর্গম এবং প্রান্তিক জনপদ বা গ্রামগুলোর মানুষের জীবন সাধারণত সেখানকার একমাত্র ধর্মীয় স্থানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এর কারণ বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করায় এই গ্রামগুলোতে অবস্থিত মন্দির, মসজিদ বা গির্জাগুলো হয়ে ওঠে বাসিন্দাদের আনন্দ উৎসবের একমাত্র জায়গা।
স্বভাবতই এই ধর্মীয় স্থানগুলোতেই প্রান্তিক অঞ্চলের সমস্ত মানুষ একত্রে সমবেত হয়। ভারতেও এরকম একাধিক অঞ্চল আছে, বিশেষত বিভিন্ন পার্বত্য বা সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে এইরকম গ্রাম দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে সুন্দরবন অঞ্চলের কিছু গ্রাম বা দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম ঠিক এরকমভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করছে।
ইচ্ছে থাকলেও এখানকার বাসিন্দারা প্রতিদিন ক্যানিং বাজারে বা দার্জিলিংয়ের প্রাণকেন্দ্রে এসে পৌঁছতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামগুলো ওলা বিবির মন্দির বা গ্রামের গির্জাকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবন আবর্তিত করে। আফ্রিকার দেশ মরক্কোর এরকম একটি গ্রাম হল তাদমামেত। এই দেশের বিখ্যাত শহর মারকেশ থেকে ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে এই গ্রামে এসে পৌঁছানো সম্ভব।
তবে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত এই গ্রামটি এক পাহাড়ি উপত্যকার কোলে গড়ে উঠেছে। এর আশেপাশে আর কোনো জনপদ নেই। সবচেয়ে কাছের গ্রামটিও তাদমামেত থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত! গ্রামের প্রায় ৪০০ জন বাসিন্দার প্রত্যেকেই মুসলমান হওয়ায় এখানকার একমাত্র মসজিদটিকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবন আবর্তিত হয়।
কারণ এটিই এখানকার একমাত্র কমিউনিটি হল। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করার ক্ষেত্রেও এই মসজিদটিই একমাত্র ভরসা। এদিকে এরকম দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় সূর্য ডুবলেই তাদমামেতের প্রতিটি মানুষের জীবন বাস্তবিকই অন্ধকারে ডুবে যেত। এর ফলে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় সন্ধ্যার পর এখানকার মানুষজন খুব একটা বাড়ির বাইরে বের হতে পারেনা।
কারণ এখানে বিদ্যুত সংযোগ না থাকায় রাস্তাঘাট স্বাভাবিকভাবেই অন্ধকারে ডুবে থাকত। মানুষকে ঘরের কাজকর্ম করতে হলে তা করতে হয় মোমবাতির আলোয়ে। এরপর ২০১৬ সাল থেকে মরক্কোর এই প্রান্তিক পাহাড়ি গ্রামটিতে বিদ্যুতের সমস্যা দূর হয়েছে। মজার বিষয় হলো এই বিদ্যুতের সমস্যা দূর করতে গিয়ে তাদমায়েতের মসজিদটি প্রথম পৃথিবীর সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী মসজিদের স্বীকৃতি লাভ করে।
মসজিদের ছাদ সোলার প্যানেল দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়। মরক্কো তথা পৃথিবীর প্রথম সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এই মসজিদটিতে প্রতিদিন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তাতে মসজিদের চাহিদা পূরণ করেও গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়েছে। তার ফলে তাদমামেতের বাসিন্দারা এখন রাতের অন্ধকারেও বাড়ির বাইরে বের হতে পারে। বাচ্চারা সন্ধ্যার পর পড়াশোনা করতে পারে।
এই গ্রাম্য জনপদটির বেশিরভাগ বাড়ি পাথরের তৈরি হলেও তারা মসজিদটি কাদা মাটির ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কারণ কাদা মাটির ইট দিয়ে তৈরি যেকোনো বাড়ি অন্য সব বাড়ির তুলনায় অনেক বেশি ঠান্ডা থাকে। যেহেতু মসজিদটি এখানকার বাসিন্দাদের একমাত্র সামাজিকভাবে জমায়েত গড়ে তোলার জায়গা, তাই তারা এটিকে এই বিশেষ পদ্ধতিতে গড়ে তুলেছিল বলে মনে করা হয়।
বিশ্বের প্রথম 'সবুজ মসজিদ ' হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে তাদমামেতের মসজিদটি। যদিও এই নজিরকে সামনে রেখে খুব দ্রুত মরক্কোর বাকি মসজিদগুলোতেও সোলার প্যানেল বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
ডেইলি বাংলাদেশ/কেএসকে