কৃষিকাজ করতেন কখনোবা চড়াতেন গরু, আজ তিনিই উদ্ভাবন করলেন সফটওয়্যার
প্রকাশিত: ১৫:০২ ৩০ নভেম্বর ২০২০ আপডেট: ১৫:৩৬ ৩০ নভেম্বর ২০২০

ছবি: আলতাব হোসেন
জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো। বাংলার এই প্রবাদ বাক্যটি সবারই হয়তো জানা। তবে এর মর্মার্থ বোঝেন কয়জনে। তবে এই প্রবাদ বাক্যের একেবারে চাক্ষুস উদাহরণ আলতাব হোসেন। প্রত্যন্ত জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেংঠী গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আতাউর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে আলতাব হোসেন।
অভাব-অনটনের সংসারে তখন পড়াশোনা করাও যেন বিলাসিতা। সেই আলতাব এবার চীনে গবেষক হিসেবে পুরস্কৃত হলেন।ছোটবেলা থেকেই বেশ মনযোগী ছিলেন পড়াশোনায়। মেধা তালিকায় প্রথম অথবা দ্বিতীয় যেন তার জন্যই থাকত। শৈশবের দিনগুলোয় খেলাধুলার সময় তেমন পাননি। অবসর বলে তার জীবনে কিছুই ছিল না। কখনো মাঠে গরু নিয়ে ছুটতেন। কখনো বা ভুট্টা আর বাদাম ক্ষেতের পরিচর্যা করে সোনালি শৈশব কাটাতেন।
আরো পড়ুন: বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার: এক ওষুধেই বয়স কমবে ২৫ বছর
সেই আলতাব হোসেন কখনো ভাবতেও পারেনি, তিনি একদিন চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন। তার উদ্ভাবনী সফটওয়্যার কয়েকটি দেশেকে পেছনে ফেলে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, নিজের অধ্যবসায়, পরিশ্রম আর মেধার জোরে বাংলাদেশের আলতাব হোসেন এখন চীনের ইউনিভার্সিটি অব ইলেক্ট্রনিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একজন গবেষক। স্মার্ট চায়না শিক্ষক নামের চায়না ভাষা শিক্ষার ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা।
নভেম্বর মাসের শুরুতে চীনে অনুষ্ঠিত চেংদু-ছংছিং বৈদেশিক শিক্ষার্থী অর্থনৈতিক বৃত্ত প্রতিযোগিতায় ৬০টি দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করে তার উদ্ভাবিত স্মার্ট চায়না শিক্ষক প্রোগ্রাম। এর আগে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক সিস্টার সিটি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেশন প্রতিযোগিতায়ও তার নির্মিত ওয়েবনির্ভর চীনা ভাষা শিক্ষার সফটওয়্যার (cnpinyin.com) প্রথম পুরস্কারও অর্জন করেছিল।
এ সাফল্যের পেছনের গল্প চীন থেকে মুঠোফোনে জানাচ্ছিলেন আলতাব হোসেন। তিনি বলেন, ‘দুঃখ-কষ্ট জীবনের অংশ। খারাপ সময় ছাড়া ভালো সময় কখনো আসবে না। সব সময় নিজের কাজ ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়া উচিত। সাফল্যের শেষ নেই। তাই এখনো নিজেকে সফল দাবি করিনা। যদিও এখানে আসতে আমাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ছয় সদস্যের পরিবারে চার ভাই-বোন পড়াশোনা করত। তাই অভাব-অনটন লেগেই থাকত। পড়াশোনার ফাঁকে খুব কম সময় পেয়েছি খেলাধুলার জন্য। অবসর সময় ক্ষেতের শাক-সবজি তুলতাম। আমাদের ওইখানে সন্ধ্যাবেলা বাজার বসত। বিকেলে তোলা শাক-সবজি ও গাভির দুধ নিয়ে বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি।’
ঝাড়বাড়ী কলেজ থেকে এইচএসসির ভালো ফলাফলের জন্য ২০০৬ সালে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ পান। ২০০৮ সালে চীনের একটি প্রতিনিধি দল তাদের ভার্সিটিতে আসে। তখন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় তিনি চীনে পড়াশোনার সুযোগ পান।
আরো পড়ুন: মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি শেন ইয়াং ইউনিভার্সিটি অব কেমিক্যাল টেকনোলজিতে গিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রির বাকি অংশ শেষ করেন। তারপর ইউনিভার্সিটি অব ইলেক্ট্রনিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়না থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। এমনকি ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন।
আলতাব হোসেন এখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক। সেখানে গবেষণার পাশাপাশি বাংলাদেশের একটি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ‘গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকৌশলী’ এবং চায়না অফিসের প্রধান প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্মার্ট চায়না শিক্ষক প্লাটফর্মের প্রোগ্রামে বাংলা সংস্করণ যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। যাতে বাংলাদেশিরা খুব সহজে চায়না ভাষা শিখতে পারে। এ প্রোগ্রামকে আরও আপডেট করে নতুন প্রোগ্রাম যোগ করে বিশ্বের বুকে সবার হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে এ গবেষকের।
ডেইলি বাংলাদেশ/কেএসকে