লিফটে আটকে থাকে ঢাবির ক্লাস
প্রকাশিত: ১৮:৩৭ ১৮ জানুয়ারি ২০২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা লিফটের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি বিভাগের প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞানের ১১ তলা ভবন অনুষদের ১৩টি বিভাগের ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে পুরদমে। তবে এত শিক্ষার্থীদেরকে তাদের বিভাগে পৌঁছাতে ভরসা শুধু একটি লিফটে। ফলে অধিকাংশ সময়ই লিফটের সামনে লেগে থাকে দীর্ঘ লাইন।
লিফট সংকটের কারণে সঠিক সময়ে ক্লাসে পৌঁছাতে পারে না অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ক্লাসের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখা সত্ত্বেও সঠিক সময়ে লিফট না পাওয়ার কারণে দেরি হয় ক্লাসে পৌছাতে। দেরি করে ক্লাসে যাওয়ার কারণে সেই ক্লাসে আর ঢুকতেও পারেন না অনেক শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন: চবিতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লিফটের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখে ২য়, ৩য় বা ৪র্থ তলার শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে সিঁড়ির পথ ধরলেও ৫ম তলা থেকে ১১তলার শিক্ষার্থীদের দাড়িয়ে থাকতে হয় সেই দীর্ঘ লাইনেই। লিফটে উঠতে প্রথমবার জায়গা পাওয়া প্রায় অকল্পনীয়। ফলে ৬ষ্ঠ তলায় উঠার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে দাড়িয়ে থাকতে হয় অন্তত ১৫-২০ মিনিট। আবার প্রতিযোগিতা করে লিফটে উঠতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেক শিক্ষার্থীদের।
আবার দ্রুত ক্লাসে পৌঁছানোর জন্য চাপাচাপি করে অনেক শিক্ষার্থী লিফটে উঠলে দেখা দেয় যান্ত্রিক গোলযোগ, ফলে সেখানে আটকা পরেন অনেক শিক্ষার্থী। দীর্ঘক্ষণ আটকা থাকার পর বের হতে পারে শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয় লিফট আতঙ্ক। এর পাশাপাশি শারিরীকভাবে দুর্বল বা প্রতিবন্ধীদের লিফট ব্যবহার আরো কঠিন হয়ে যায়।
আরো পড়ুন: ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটে শূন্য আরো ২৮০ আসন
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এত বড় একটি ভবন, এত এত শিক্ষার্থীর ক্লাস করার জন্য এই ভবনে আসতে হয়। সেখানে একটু লিফট খুবই অপ্রতুল। এতে যেমন দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে সময় নষ্ট হয় পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। উপরের তলার শিক্ষার্থীরা না পারে সিঁড়ি বেয়ে ক্লাস যেতে আর এত দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকতেও অতিষ্ঠ তারা।
তবে লিফট স্বল্পতার অবস্থায় আশার দিক হচ্ছে, সংকট সমাধানে ভবনটির ভেতর দিকে কাজ চলছে আরও দুটি লিফট নির্মাণের। সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সেবা দেয়া শুরু করবে তত তাড়াতাড়িই দুর্ভোগ গুছবে শিক্ষার্থীদের।
আরো পড়ুন: রাবিতে রাত ৮টার পর বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
লিফট বিড়ম্বনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিজ খান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, লিফট জটিলতায় আমরা সত্যিকার অর্থেই খুব বিরক্তবোধ করছি। প্রতিনিয়ত ক্লাস করতে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে কিংবা ক্লাস শেষে নিচে নামার আগ মুহূর্তে আমাদের বড় একটি সময় কাটাতে হয় বাস বা ট্রেন লাইনের টিকেট কাটার মতো করে লাইনে দাঁড়িয়ে। এই দীর্ঘ লাইনের কারণে অনেক সময়ই আগে আসার পরও ক্লাসরুমে গিয়ে দেখি ক্লাসে শিক্ষক চলে আসছে। অনেক সময় ক্লাসই মিস হয়ে যায়। একইসাথে নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে যেতে অনেকসময়ই বাধ্য হয়েই সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী লিফটে উঠে। ফলে মাঝে মাঝে লিফট আটকেও যায়। যদিও ভবনটির আরেক পাশে নতুন দুটি লিফট স্থাপনের কাজ চলছে। কয়েক বছর আগে এটির শুরু হলেও প্রশাসনের উদাসীনতায় আজ পর্যন্ত সে কাজ শেষ হয়নি। আমরা শিক্ষার্থীরা ভবনের নির্মাণাধীন নতুন দুটি লিফট দ্রুত চালু করার মধ্য দিয়ে এ সমস্যার সমাধান চাই।
আরো পড়ুন: নিরাপত্তাহীনতায় ক্যাম্পাস, বাড়ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন শাহরিয়ার প্রান্ত বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন- বাইরে থেকে দেখে মনে হয় বর্তমানের ছোঁয়ায় তৈরি করা এক আধুনিক স্থাপত্য, যা অনেকাংশে সত্যিও। কিন্তু এই আধুনিক ভবনে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় এক মান্ধাতার বিড়ম্বনায়। ১১ তলা ভবনটির প্রায় সবক'টি ফ্লোরেই পুরোদমে চলছে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ক্লাস। শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে ভবনটি।
অথচ এই ডিপার্টমেন্টগুলোর শত শত শিক্ষার্থীর প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য রয়েছে একটি মাত্র লিফট! অদ্ভুত শোনালেও এটাই বাস্তবতা যে ১৮-২০ জনের ধারনক্ষমতা সম্পন্ন একটি লিফটের উপরই নির্ভর করতে হয় পুরো সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের। তাই যেখানে লিফটের কাজ হলো দ্রুততম সময়ে শিক্ষার্থীদের নিজ ক্লাসরুমে পৌঁছে দেয়া, সেখানে লিফটের জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই নষ্ট হয় অনেকটা সময়। অল্প ধারনক্ষমতার এই একটি লিফটে প্রথমবারেই জায়গা পাওয়া রীতিমতো কাল্পনিক ব্যাপার। শততম বর্ষে এসে লিফটের জন্যে শিক্ষার্থীদের হুড়োহুড়ি দেখা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।
আরো পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবিতে শূন্য আরো ১০২৮ আসন
এবিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা জেনেছি, আমরা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি৷ আমি আবারো নোট নিলাম। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দুইটা লিফটের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেগুলো ঠিক হয়ে গেলে এই সমস্যা আর থাকবে না।
ডেইলি বাংলাদেশ/জেডএম