৬০ পদকের তেইশই স্বর্ণ, অলিম্পিকে খেলতে চান রাবির রতিশ
প্রকাশিত: ১৫:১১ ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ আপডেট: ১৫:১৫ ১৮ ডিসেম্বর ২০২১

ট্রফি হাতে রাবি শিক্ষার্থী রতিশ টপ্য, ডান পাশে তার অর্জিত পদক
কখনো ফুটবল, আবার কখনো সাঁতার কিংবা ভলিবল, কখনো বা খো খো খেলা। পড়াশোনার পাশিপাশি সারা বছর জুড়েই বিভিন্ন খেলা আর অনুশীলনে ব্যস্ত থাকেন। আন্তঃবিভাগ, আন্তঃকলেজ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগীয় প্রতিটি সেক্টরে রেখেছেন সাফল্যের অবদান। ইতোমধ্যে জিতেছেন ৬০টিরও বেশি পদক। যার মধ্যে স্বর্ণপদক রয়েছে ২৩টি। দুইবার ন্যাশনাল এ্যাথলেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্প্রিন্টে হয়েছেন চতুর্থ। তবে স্বপ্ন দেখেন একদিন ধরা দেবে ন্যাশনাল পদক। খেলতে চান দেশের হয়ে অলিম্পিক গেমস। বলছিলাম রতিশ টপ্য’র কথা।
রতিশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার বদলগাছী থাকার শ্যামপুর গ্রামে।
দুরন্ত শৈশব
রতিশ টপ্য’র বেড়ে ওঠা গ্রামে। তার শৈশব কেটেছে দুরন্তপনায়। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিলো প্রচন্ড আগ্রহ। পছন্দের তালিকায় সবার উপরে ছিলো ফুটবল। পাশাপাশি অন্যসব খেলাধুলায় ছিলো মনোযোগী। গ্রামেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাধ্যমিকে ভর্তি হোন খ্রিস্টান মিশনারী স্কুলে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কোনো পুরস্কার পাননি। রতিশ বলেন, ‘পুরস্কার না পেয়ে প্রচন্ড জেদ কাজ করেছিলো। প্রতিজ্ঞা করলাম পরের বছর পুরস্কার জিতবো। ক্লাস সেভেনে তিনটি খেলায় প্রথম হই।’
বিকেএসপির স্বপ্ন ভঙ্গ
খেলাধুলায় একের পর এক সফলতা অর্জনে ডাক পান নাটোর বিকেএসপিতে। কিন্তু পা কেটে যাওয়ার কারণে সুযোগ পেয়েও বঞ্চিত হোন টপ্য। রতিশ বলেন, ‘নাটোর বিকেএসপিতে আমাকে খেলার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে বছরই আমার পা কেটে যায়। যার কারণে সেখানে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয়।’ তবুও থেমে যাননি তিনি। খেলাধুলা আর পড়াশোনা এই নিয়ে বেশ ভালোভাবেই শেষ করেন স্কুল জীবন। ভর্তি হোন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজে। কলেজে যেকোনো প্রতিযোগিতায় পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন রতিশ।
৭৫৩ একরে বদলে দেয়া এক বিকেল
উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৭৫৩ একরে প্রতিটি শিক্ষার্থীর এক একটি বিকেল ধরা দেয় আলাদাভাবে। তেমনি এক বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বসে নিজ ডিপামের্ন্টের ফুটবল খেলা দেখছিলো রতিশ। স্ট্রাইকার সহজ একটি গোল মিস করে তা দেখে আক্ষেপ জাগে। তার অবচেতন বলে উঠে, ‘আমি থাকলে এই গোলটা দিতে পারতাম।’ তখনো জানতেন না আগামী বছর এই দলের নেতৃত্ব দেবে রতিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলোয়াড়দের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে সেটা তার অজানা ছিলো। পরে তার বন্ধু আলফ্রেডের মাধ্যমে শুরু করেন নিয়মিত খেলা।
বিশ্ববিদ্যালয় কোচের নজরে রতিশ
পড়াশোনা আর ফুটবল এই দুই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন বেশ ভালোই কাটছিলো রতিশের। তার ফুটবল খেলার গতি দেখে নজর কাড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক পার্থ প্রতিম মল্লিকের। তিনি তাকে পরামর্শ দেন এ্যাথলেটে আসতে। এরপর এ্যাথলেটিক্সে মনোযোগ দেন টপ্য। ফুটবলের পাশাপাশি ভলিবল, সাঁতার, স্প্রিন্ট, হাই জাম্পের নিয়মিত প্রাকটিস করতে থাকেন।
প্রথম পদক জয়
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে একটি বোঞ্জ পদক জিতেন রতিশ। তিনি বলেন, ‘সেই পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করার মতো। কিছু অনুভূতি আছে যেটা অন্য কাউকে বুঝানো যায় না।’ এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। আন্তঃবিভাগ, আন্তঃকলেজ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগীয় প্রতিটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জিতেছেন ৬০টির বেশি পদক। টপ্য বলেন, ‘আমি আমার মেডেলগুলো অনেক ভালোবাসি। দিনশেষে যখন মাঠ থেকে রুমে আসি এই পদকগুলো আমাকে অন্য রকম প্রশান্তি দেয়।’
ভবিষ্যত ইচ্ছা
রতিশ বলেন, ‘আমি খেলাধুলা প্রিয় মানুষ। ভবিষ্যতেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবো। দুবার ন্যাশনাল গেমসে অংশগ্রহণ চতুর্থ হয়েছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা খেলে তারা আমাদের তুলনায় বেশি সুযোগ-সুবিধা পায়। পর্যাপ্ত সুযোগ ও প্রশিক্ষণ পেলে তাহলে একদিন ধরা দেবে জাতীয় পদক। দেশের হয়ে অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করতে চাই।’
ডেইলি বাংলাদেশ/জেডএম