আমলাদের গাড়ি বিলাসিতা নিয়ন্ত্রণের বাংলাদেশ চাই কেমন বাংলাদেশ চাই আরটিভি ২৩২০ ঘটিকা ০১ মার্চ ২০২১
2021-03-01 23:30:00
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাঃ
(সরকারি) কর্মকর্তাদেরকে ডেপুটি সেক্রেটারি হলেই গাড়ি দেওয়া হচ্ছে। তা আবার সব ক্যাডারের জন্য না, কোন কোন ক্যাডারের জন্য। এটা সম্পূর্ণভাবে একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। কারণ মানুষের করের পয়সা শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি বিলাসের জন্য দেওয়া এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে আমি মনে করি যে এটা প্রশাসনকে তুষ্ট রাখার জন্য এক ধরনের উপহার দেওয়া। বাংলাদেশে গণপরিবহন গড়ে উঠছে না এই কারণে, কারণ পুরো সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয় আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে এবং তারা প্রাইভেটকার অরিয়েন্টেড পলিসি ছাড়া কোনো গণপরিবহনের কথা চিন্তাই করতে পারে না। আর মানুষের কথা তাদের ভাবনার জগতেই নাই এবং এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমেই একটা বুরোক্রিটিভ স্টেটে পরিণত হচ্ছে। অর্থাৎ আমলারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে, আমলাদের কথাতেই সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে।
পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আখতার মাহমুদঃ
বাংলাদেশে একটা সময় ছিল যে সময়টাতে প্রকল্পের কাজের জন্য গাড়ি কেনা হতো কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে সরকারের সক্ষমতা বেড়েছে। এখন আমরা দেখি যে কি অপব্যবহার শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটা প্রকল্পের অধীনে কাজে-অকাজে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানাভাবে এই গাড়িগুলো ক্রয় করা হয় এবং এই গাড়িগুলো প্রকল্পের কাজের বাইরেও অনেক জায়গায় ব্যবহার হয়। আমাদের সামাজিক কাঠামোতে এমন একটা শ্রেণি তৈরি হয়েছে যেখানে অনেক পেশার লোক আছে, যাদের মধ্যে একধরণের মিথস্ক্রিয়তা আছে। ট্রান্সপারেন্সি-একাউন্টিবিলিটি তো আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। কাউকে কোথাও জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। আবার এমন অনেক অফিসে এমন কিছু অংশ আছে যেখানে প্রচুর জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু একটা সেগমেন্টই আছে যাদের হয়তো কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না। এই যে জবাবদিহিহীন একটা বিলাসি জীবন যাপনের একটা চর্চা চলছে সেখানে আমরা কেউ কাজ করতে পারছি না।
আবু আলম মোঃ শহিদ খানঃ
শুধু এখানে কিন্তু গোড়ায় গলদ। যে আপনি একটা পরিবহন পুল আছে, এই পরিবহন পুলটার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছে না এবং এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অধীনস্থ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা এবং এখানে একজন মাননীয় মন্ত্রীও আছেন, এখানে একজন সচিব আছেন। সুতরাং তাদেরকে এটার জবাব দিতে হবেজ। এখন আমাদের রাজনীতিবিদরা যদি পার্লামেন্টে এরকম একটা আইন করে নেয় যে, তারা শুল্কমুক্ত গাড়ি আনবেন এবং শুল্কমুক্ত গাড়ি পাবেন। ৩০০ বা সাড়ে ৩০০ পার্লামেন্টেরিয়াল এবং এর আগে আরও ছিল, এভাবে যে আইনটা করা হয়েছিল। এটা তো একদম সংবিধান বিরোধী, এটা মৌলিক অধিকার বিরোধী।
খুশি কবিরঃ
সবচেয়ে ধনী যারা তারাই বেশি দুর্নীতি করছে। সুতরাং টাকা হলেই যে সে দুর্নীতি করবে না, সেই চিন্তাটা আমাদের মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দিতে হবে। হরিলুটের যে সংস্কৃতি, এটা কেন হচ্ছে? জবাবদিহিতা নেই, প্রশাসনিক একটা দায়বদ্ধতা যে থাকতে হবে, একটা চেইন অব কমান্ড যেটা, সেগুলো নেই, স্বচ্ছতা নেই, যে যা পারে সেভাবে করে এবং কেউ মনে করে না যে এটা তার দায়িত্ব যে সঠিকভাবে একটা ব্যবস্থাপনার মধ্যেই থাকতে হবে ।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদঃ
এতদিন তারা এটা (আমলাদের গাড়ি কেনা) গোপনে ছিল, আলোচনাটা খুব ভেতরে ছিল, সেই আলোচনাটা যখন সামনে এসে তাদের লাজ শরমটা যদি আমরা ভেঙে দেই, এটা কিন্তু ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ হয়ে যেতে পারে। আর এটাই হলো একটি বাস্তবতা। আজকে এই যে করোনার কারণে আপনার প্রতিষ্ঠান বা আমরা যারা আছি সবাই কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কিন্তু মধ্য দিয়ে দেখেন ১ লক্ষ কোটি টাকা ব্যবসায়ীরাই নিয়ে গেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখন আপনি রিসার্চ করে দেখেন, গার্মেন্টরা কিন্তু তাদের লস হয়নি। কারণ তাদের টোটাল যে এক মাস বা দেড় মাস বন্ধ ছিল, তাদের টোটাল হিসেব করে দেখলে তাদের লস হয়নি, কিন্তু ১ লক্ষ কোটি টাকা তারা নিয়ে গেছে। এই কারণেই আমি মনে করি যে টোটাল জায়গাটা হলো যে, রাষ্ট্রের যে মূল জায়গা, ‘রুল অব ল’ যেটা, সেই জায়গাটায় যে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে ওই দুর্বলতার ফল হলো সব এখন আমাদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একা কি করবেন? উনি যে আাজকে নির্দেশ দিয়েছেন, অনেকগুলো নির্দেশ যুগান্তকারী দুর্নীতির বিরুদ্ধে, জুয়া বন্ধ করা। এই আজকে গাড়ির কথা বললেন, কোনোটাই কার্যকরী হবে না। জোর দিয়ে ওইগুলো হবে যেগুলো দেখবেন প্রশাসন যারা চালাচ্ছে, যারা মূল কেন্দ্রবৃন্দে আছে তাদের স্বার্থ জড়িত নেই, সেইটা হবে। যদি হয় আজকে ওমুকে সরকারের বিরুদ্ধে কি একটা বক্তৃতা দিচ্ছে, তাকে ধরো, ওইগুলো সবকিছু হয়ে যাবে কোনো সমস্যা নেই।
আহসানুল ইসলাম টিটুঃ
প্রজেক্ট ইম্প্লিমেন্টেশন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ট্রান্সপারেন্সি এবং একাউন্টিবিলিটি জায়গাটা আমার মনে হয় দুর্বল। কারণটা হলো যে, যার যে কাজটা মানে আমলাদের দেখাশোনার জন্য তাদের সুযোগ-সুবিধা যেটা তারা পায় বা যেটা ব্যবহার করে, সেটা দেখার জন্য কিন্তু তাদের নিজস্ব ভিন্ন মন্ত্রণালয় আছে। সে মন্ত্রণালয়গুলো যদি যার যার দায়িত্ব পালন করে তাহলে কিন্তু আর এই কথাগুলো আসেনা। গাড়ি কিন্তু তিন ধরনের একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে যে ব্যক্তি গাড়ি যেটা ৫০ লক্ষ টাকা বা ৩০ লক্ষ টাকা, যেটায় ৫০ হাজার টাকা ভাতা পায়। আরেকটা হল মন্ত্রণালয়ের গাড়ি এবং এখন আরেকটা গাড়ি দাঁড়িয়েছে যেটা প্রকল্পের গাড়ি।সুতরাং এই গাড়িগুলো যে সবগুলো এক জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় সেটা কিন্তু সঠিক নয়।