একাত্তর সংযোগ, একাত্তর টিভি ২০০০ ঘটিকা ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
2020-12-04 20:00:00
শাকিল আহমেদঃ
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের চোখে মুখে একটা স্বস্তি দেখা গেছে এবং সবাই আনন্দিত, তবে একদিনেই পূণাঙ্গ উপলব্ধি বিশ্লেষণ করা কঠিন কাজ। স্বস্তির সাথে সাথে তাদের ফেলে আসা স্বজনদের জন্য একটা চিন্তাও তাদের মধ্যে ছিলো যে তাদের আবার কবে দেখবে। এক কথা বলতে গেলে প্রকাশে তারা বলছেন যে তারা খুশি। এবারে যারা এসেছে তাদের মধ্যে তরুন দম্পতির সংখ্যা সব চাইতে বেশি এবং বড় পরিবারের একটা এংশ এখানে এসেছেন এবং আরেকটা অংশ ক্যাম্পে রয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এখানে যারা এসেছেন তারা ২০০৭/০৮ সালে আসা রোহিঙ্গারাই বেশি। উন্নতজীবনে স্থানান্তররে মানে এই না যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি পিছিয়ে যাবে, বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চ মানবিকতার প্রকাশ করেছে। ভাসানচরে খরচের পরিমান বাড়লেও বাংলাদেশের মানুষের জন্য দীর্ঘ স্থায়ী স্বস্তির বিষয় হবে কারণ এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সমস্যা হতে যাচ্ছিলো কিন্তু এই উদ্যোগের কারণে এটা আর হবে না।
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমঃ
আজকে যদি আমি ভাসানপরে থাকতে পারতাম তাহরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করতাম কারণ তাদের অনেক প্রশ্ন করতে পারতাম। আমরা সেখানে অপেক্ষাকৃতভাবে তরুণদের কেই বেলি দেখতে পেরেছি। ভাসানচরে অবশ্যই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের থেকে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ভাসানচরের ক্লাস্টারগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ ফিট ওপরে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ১৪ ফিট উপরে করা হয়েছে, সেখানে স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাসপাতাল, চাষাবাদের ব্যবস্থা আছে। ভাসানচরে জীবন জীবিকা পরিচালোনার জন্য কোন ব্যবস্থা করা হবে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন, তবে সেখানে নিরাপত্তার জন্য যাদের থাকার কথা তারা এবং রোহিঙ্গারাই আছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর বিষয়ে নিরুৎসাহী বুঝতে পারছি না।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম শাখওয়াত হোসেনঃ
রোহিঙ্গারা অনেক আগের থেকেই মিয়ানমারে অবহেলিত ছিলো। বিশ্বের যেকোন রিফিউজি ক্যাম্পে নানান ধরণের অপরাধ হয়। বাংলাদেশের রিফিউজি ক্যাম্প আমাদের জন্য তো বড়ই এমনকি বিশ্বে অন্যতম বৃহত্তর রিফিউজি ক্যাম্প এটা। যেই রোহিঙ্গারা এসেছে তাদের মধ্যে কেউ যে মিয়ানমারের অপরাধী ছিলো না সেটা আমরা বলতে পারবো না। মাদক চোরা চালানের বিষয়ে রিফিউজি ক্যাম্পে একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে যার সাথে জরিত রোহিঙ্গারা, মিয়ানমারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আমাদের স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু কিছু অংশ। মাত্র ১ লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে নিয়ে গেলেই যে মাদক চোরাচালানী বা অপরাধ কমবে সেটা আমরা বলতে পারবো না। ভাসানচরে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে এখন কোন সমস্যা না দেখলেও ভবিষ্যতে চরের মানুষের সাথে কোন বিরোধ হলে কিভাবে সেটা মোকাবেলা করা হবে সেটা কিন্তু একটা প্রশ্ন কারণ চরের মানুষরা নিজেদের মধ্যেই ধান কাটা নিয়ে বিরোধ করে। রোহিঙ্গারা জীবন জীবিকা পরিচালোনার জন্য সেখানে কিছু করতে পারবে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন। রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করার চিন্তা করলে একটা ভুল বার্তা চলে যাবে।
শমসের মবিন চৌধুরীঃ
আজকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ভাসানচরে তাদের স্থানান্তরের কারণ হচ্ছে তারা যেন একটু ভালো থাকতে পারে কিন্তু মূল লক্ষ্যই হচ্ছে তাদেরকে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া নিশ্চিত করা। যদিও গত ৩ বছরে এই কাজে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি, অচিরে হবে বলে আমিও মনে করি না। বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব রোহিঙ্গারা যেন আপেক্ষিকভাবে ভালো থাকতে পারে সেটা নিশ্চিত করেছে। আকে ১ হাজার ৬৪২ জন নেয়া হয়েছে, আশা করি আগামীতে ক্রমাগত একলক্ষ লোক নেয়া হবে। ভাসানচরে বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশকে চাপ না দিয়ে মিয়ানমাকে দেয়ার দরকার ছিলো এবং সেই কাজে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। কোন রিহিঙ্গাদের জোর করে সেখানে পাঠানো হয়নি তারা নিজেরে ইচ্ছায় সেখানে গিয়েছে।