গনতন্ত্রের সংলাপ আরটিভি ২৩২০ ঘটিকা ০১ ডিসেম্বর ২০২০
2020-12-02 07:50:00
অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরীঃ
আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা টাকা পাচার এবং এটা স্বল্প উন্নত দেশের মধ্যে এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রথম। এই পাচারকৃত অর্থ কানাডা, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, মালয়েশিয়া, এই দেশগুলো সেই অর্থ ভোগ করছে এবং সেখানে বিনিয়োগ হয়। ইতিমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে কানাডার বেগম পাড়া। টাকা পাচারের হিসেবে আমরা ভারতকেও ডিঙিয়ে গেছি। আমাদের সমস্যাটা সমাধান করা দরকার কারণ দুর্নীতিতে রাজনীতিবিদ কমে গিয়ে ব্যবসায়ী ও আমলাদের সংখ্যা বেড়েছে বলে আত্মসন্তুষ্টির কিছু নেই। (০০:২০:৪৫) মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রযন্ত্রটা পরিচালনা করে যে সরকার। সরকারি দল আর রাষ্ট্রযন্ত্র আলাদা। এই সরকারের আমলে রাজনীতিবিদদের গুরুত্ব কমে যাওয়ার কারণে, আমলা নির্ভর সরকার হওয়ার কারণে তাদের যে আধিপত্য অবস্থান ক্ষমতা, সেগুলোর কারণে এবং সেটা দুর্নীতির কাজে বেশি করে ব্যবহৃত মেগা প্রজেক্ট, মেগা চুরি করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্র হওয়ার কারণে (০০:২১:০৮)।
অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খানঃ
টাকা পাচার করে তারাই, যাদের কোনো দেশপ্রেম নেই। বিদেশে যে টাকা পাচার হয় সেটা জব্দ করা সম্ভব কিন্তু আমাদেরকে বিদেশের পুলিশকে যথেষ্ট নথি দিয়ে বোঝাতে হবে যে পাচার হয়ে যাওয়া টাকাটা বাংলাদেশের টাকা, তাহলে সেটা ফেরত আনার একটা ব্যবস্থা হতে পারে। ভারতে আমার দেশে থেকেও আরও বেশি টাকা যাচ্ছে। সুইস ব্যাংকের যে ডাটা সেটা ২০১৫ সালের ডাটাটাই ২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত চালিয়েছে। আমরা টিআইবি’র রিপোর্টকে এখনও মনে করি স্বচ্ছ না এবং এন্টি গভমেন্ট মনোভাব একটা কাজ করে তাই তারা সেইভাবেই রিপোর্ট দেয় নিজেদের হিরো মনে করার জন্য।
এ টি এম তাজ রহমানঃ
টাকা পাচারের একটা কারণ আমাদের পলিসির মধ্যেও আছে, একটা মানুষ বাইরে যদি যেতে চায় তবে সে ৫-১০ হাজার ডলারের বেশি নিয়ে যেতে পারবেন না কিন্তু এই টাকা নিয়ে সে যদি সিঙ্গাপুরে যায় তাহলে তার তো দুই তিন দিনেই শেষ হয়ে যাবে হাসপাতালের বিল দিয়ে। অনেকেই ওভার ইনভয়েস করে টাকা বিদেশে নেয়, মার্কেটিং করে নিয়ে যায় বিদেশে। আগে রাজনীতিবিদদের ঢালাওভাবে বলা হতো কিন্তু এখন সেই ভুল ধারনাটা নেই। দেশের মানুষ যদি নৈতিকভাবে ঠিক না হয় তবে একটা দেশের সরকার কোনোভাবে তাদের ঠিক করতে পারবে না।
সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্সঃ
আজকে শুধু কানাডার বেগম পাড়ার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু কানাডায় এমন অনেক পাড়ার সৃষ্টি হয়েছে যেগুলো বেগম পাড়াকে ম্লান করে দিচ্ছে। আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পিন্টার বলেছে, গত ৫-৬ মাসে যে পরিমান অর্থ বাংলাদেশ থেকে কানাডাতে গেছে সেটা নাকি গত ৫-৬ বছরেও সেরকম অর্থ কানাডাতে যায়নি। প্রায় দুইশ’ত বাংলাদেশিদের তালিকা আছে যারা বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে। (০০:০৭:৩৮) সরকার এক্টিভ, আমরা কখন একটিভ হতে দেখি, যখন এগুলো ধরা পড়ে কিন্তু এগুলো যখন অবৈধভাবে উপার্যন হচ্ছে বা মানুষের পকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছে বা পাচার হচ্ছে, পাচার করা অবস্থায় তো আমরা কাউকে ধরতে দেখি না। যখন এগুলো পত্রপত্রিকায় আসে বা বিভিন্ন সূত্র ধরে গণমাধ্যমে আসে তখনই ততপর হয়ে সম্রাট বা এরকম জাতীয় কিছু লোককে ধরা হয়ে এবং বলা হয় যে আমরা সব ধরছি (০০:০৮:১০)। টাকা পাচার কিভাবে বন্ধ করা যাবে সেটা আমাদের সবাইকে চিন্তা করে বের করতে হবে এবং এক সাথে কাজ করতে হবে।
ব্যারিস্টার সেলিম আলতাব জজঃ
টাকা পাচার ইদানিংকালে শুরু হয়নি, এটা বহু বছর ধরে চলে আসছে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে সেকেন্ড হোম বা সেফ কোনো জায়গায় টাকাটা তারা রাখছে। টাকা পাচার শুধু বাংলাদেশের সমস্যা সেটা নয়, এটা সারা বিশ্বেই চলছে। ১৯৭৫ এর পরে দেশকে যেভাবে জঙ্গি ও মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালনা শুরু হয় এবং সেখান থেকেই মানুষের মূল্যবোধের যে অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকেই এই মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। এটা সহজে মানুষের থেকে যাবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এক প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করলে হবে না, দুর্নীতি দমনে সবাইকে নিজ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে একটা ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে যে কিভাবে এটি বন্ধ করা যায়।