সাম্প্রতিক ঘটনাবলি মুক্তবাক, চ্যানেল-২৪ টিভি ২৩০০ ঘটিকা ৩০ নভেম্বর ২০২০
2020-11-30 23:00:00
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাঃ
হেফাজতের আহমেদ শরীফ সাহেব মারা যাবার পরে হেফাজতের যে পরিবর্তনটা দেখা যাচ্ছে সেখানে মূলত হেফাজতের একটা জঙ্গি রূপ আমরা দেখতে পেয়েছি। হেফাজতের মূল আর্দশের জায়গায় কিন্তু হেফাজত রয়ে গেছে, তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিটাই করে। যদিও তারা বলে তারা কোন রাজনীতি করে না। হেফাজতের বর্তমান চেহারাটাই কিন্তু আসল চেহারা। মামুনুল হক সাহেব ও জুনায়েদ বাবুনগরী প্রেস ক্লাবে নানা রকম ব্যাখ্যা দিলেও তারা কিন্তু তাদের জায়গা থেকে সড়েনি। আজকে পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা কারিরা কেউ কিন্তু গ্রেপ্তার এড়াতে পারেনি তারা এখনো পার পাচ্ছে কি করে? তারপরও আমি বলবো ভাস্কর্য ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও সরকার দেড়িতে হলেও একটা অবস্থান নিতে শুরু করেছে। ধর্ষণ সম্পর্কে বলতে গেলে বলবো যে ফাঁশি দিয়ে দিলেই ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে এমন না, ধর্ষণ বন্ধ করার মত সমাজ নির্মাণ করা প্রয়োজন এখনো আমরা কেউ সেটা নির্মাণ করতে পারিনি। যখন যেই দল ক্ষমতায় থাকে তাদের ছাত্র সংগঠনের যেই দৌড়াত্ব এবং যা ইচ্ছা তাই করার প্রবনতার সাথে কিন্তু একটা ক্ষমতার যোগাযোগ আছে। নানা ধরণের বৃহত্তর অন্যায়ের একটা নির্দশন হচ্ছে ধর্ষণ, সমাজে এমন আরো অনেক ঘটনা ঘটছে। পুলিশদের ডোপ টেস্টের ঘটনাটি স্বাগত জানানোর মত একটি ঘটনা। আমরা পুলিশকে বাহিনী রূপে দেখতে শুরু করেছি, পুলিশ জনগণের মধ্যে গড়ে উঠা জনগণের একটি সংস্থা।
মাসুদ কামালঃ
যে কথাটা হেফাজতের নেতা বলেছেন সে কথাটা যদি জামাতের একজন নেতা বলতেন তাদের বিরুদ্ধে কি একই ব্যবস্থা নেয়া হতো? সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে এখন ঘটনাটা গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘটনাটা কে ঘটিয়েছে! গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই ঘটনার মাধ্যমে কাকে কাকে জড়ানো যায় সেটা। আপনি আইন যখন চর্চা করবেন, আইনের কথা বলবেন, ততক্ষন পর্যন্ত ব্যক্তিকে উপেক্ষা করে ঘটনাকে গুরুত্ব দিতে না পারবেন ততক্ষন পর্যন্ত আইনের শাসন চালু হবে না। হেফাজত যদি রাষ্ট্রদখল করতে চায় তাতে আমার কোন আপত্তি নাই এটা তারা করতেই পারে কারণ যে কারোই অধিকার রয়েছে রাজনীতি করার কিন্তু আমার আপত্তি হচ্ছে সারা সংবিধান লঙ্ঘন করছে কিনা তাতে। হেফাজত সংবিধান বিরোধী আচরণ করছে। আমার সংবিধানের কোথায় লিখা আছে যে ভাস্কর্য বা মূর্তি বানানো যাবে না? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোন প্রসঙ্গে কি বলেছেন এবং কোন সুরে বলেছেন সেটা কিন্তু বুঝতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চেয়েও কিন্তু বড় সংবিধান। বাবুনগরী ও তার দল যেই কাজটি করতেছে সেটা বেআইনি। আজকে ওবায়দুল সাহেব খুবই নরম একটা কথা বলেছেন, তাহলে এতদিন পরে তার কানে পানি ঢুকেছে? এভাবে হয় না! এটা করারপর আপনি দাবি করবেন আমরা আইনের শাসন কায়েম করেছি! কথাটা মিলে না। সাংবাদিকরা আসলে টাটকা সংবাদ দিতে চায়। ক্ষমতা থাকলেই যে ধর্ষণ করার মনভাব তৈরি হয় এমনটা কিন্তু না। যারা মানসিকভাবে তৈরি থাকে ধর্ষণের জন্য তারা করে। ধর্ষকরা ভাবে ১০টা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে একজন ধরা পরেছ সেই একজন তো আমি নাও হতে পারি। সমাজে বিচারের সংস্কৃতিটা যখন মুখ চিনে চিনে করা হয় তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। যখন অপরাধীরাই ক্ষমতায় চলে আসে তখনই সমস্যা হয়। এমপি ধরা পরে বিদেশে জেল খাটে মানব পাচারের ঘটনায়! এই ঘটনাগুলো কি আমাদের জন্য সম্মানজনক? একজন ধরা পরেছে! ভালোমত খুঁজে দেখেন আরো কত পাবেন। এগুলোকে একদিকে উৎসাহ দিবেন যে তোমার টাকা আছে তুমি আসো আমার দলে তারপর আবার আশা করবেন যে আমাদের সমাজের জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কথা বলবেন! এই দুটা এক সাথে হয় না। ইতিবাচক দিক হচ্ছে আমাদের নীতি নির্ধারকরা বুঝতে পেরেছে যে আমাদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে তাই পুলিশদের কেউ ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে এসেছে।
নাঈমুল ইসলাম খানঃ
আমার ধারণা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মূল শক্তি, মূল চিন্তা ভাবনার উৎস দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমার ধারণা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কেউই কিছু বলছিলেন না। হেফাজত প্রবলভাবে বিএনপি ও জামাতের সর্মথক ছিলো। হেফাজতের ভেতর যারা উগ্রবাদি না, তরুন ও উদার গণতান্ত্রিক মনভাবের যারা তাদের চিহ্নিত করে ওই উগ্রবাদী গ্রুপ থেকে পৃথক করার একটা সময় ও সহিসনতার আচরণ সম্ভত শেখ হাসিনা পচ্ছন্দ করছেন। হেফাজত বিশাল জাতীয় পর্যায়ে একটা ইসলামী শক্তি যারা দুই ধারায় বিশ্বাসী বলে তাদের বিভাজনটা দেখা যায়। আপনি যদি হেফাজতের জাতীয় পরিসরে শক্তি সামর্থটা দেখেন সেটা কিন্তু উপেক্ষা করার মত না। আমিও মনে করি তাদের ভেতর থেকে শুভবুদ্ধির মানুষ, একটু উদার চিন্তা ভাবনা করারমত মানুষগুলোকে বোঝানোর সুযোগ দেয়া ভালো। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়ার উপকারিতা হচ্ছে যতটুকুই বিচারে আসে তারমধ্যে কিছু ন্যয় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেই ঘটনায় মিডিয়া এবং সোস্যাল সোসাইটি সক্রিয় হয় সেইটা বিচার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একজন বিপদে পরলে কেউ ঢেকাতে আসে না কেন? শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় একাচাটিয়াত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাই কেউ কাউকে বাঁচাতে আসে না। পুলিশের ডোপ টেস্টের বিষয়টি সম্প্রতি নেয়া হয়েছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এধরণের অভিযোগ আগের থেকেই ছিলো এবং এগুলো নিয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্টিং ও টেলিভিশনে প্রতিবেদনও দেখিয়েছে যে শুধু মাদক সেবন না মাদক ব্যবসায়ের সাথেও কারো কারো সম্পৃক্ততা আছে। পুলিশের এই উদ্যোগটা শুধু স্বাগত জানাই না আমি মনে করি তাদের এই উদ্যোগটা সমাজের বিভিন্ন ন্তরে চলমান রাখা প্রয়োজন। ডোপ টেস্টের মদ্যেও কিন্তু দুর্নীতি ঢুকে যেতে পারে সুতরাং আমাদের দুর্নীতি রোধের বিষটাকেও প্রধান্য দিতে হবে।