ম্যারাডোনা: যে গল্পের শেষ নেই, ২৪ ঘন্টা যমুনা টিভি ২৩০০ ঘটিকা ২৬ নভেম্বর ২০২০
2020-11-26 23:00:00
আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নুঃ
ম্যারাডোনার কারণে এতো মানুষের শোক এর আগে কখনো কোন ক্রিয়া ব্যক্তির জন্য দেখা যায়নি এবং আমি ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোক ও তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। ম্যারাডোনার আমার খুবই একজন প্রিয় খেলোয়াড় এবং ফুটবল খেলার ক্ষেত্রে আমি তাকে সবসময় অনুসরণ করতাম। ম্যারাডোনার এই যে এতো জনপ্রিয়তা তা কিন্তু তিনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন এবং ৮৬ সালের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ থেকে শুরু করে ফাইনাল ম্যাচ পর্যন্ত ম্যারাডোনা খুবই অসাধারণ খেলেছেন। ৮৬ সালের বিশ্বকাপে তিনি অবিস্মরণীয় একটি খেলা উপহার দিয়েছেন এবং যা না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না। তার খেলার মধ্যে কিছু সৃষ্টিশীল খেলা ছিল, পায়ের নৈপুণ্য ছিল, কারুকার ছিল এবং বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি যে ২ টি গোল করেছে যার মধ্যে ১ টি ঈশ্বরের হাত হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।
আমিনুল হকঃ
ম্যারাডোনা একজন অন্যরকম খেলোয়াড় ছিলেন, ৮৬ সালের বিশ্বকাপের পরে বিশ্ববাসী আর্জেন্টিনাকে চিনেছে এবং বিশ্ববাসীর ফুটবলের মাধ্যমে ম্যারাডোনাকে চিনেছে। পরবর্তীতে খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরেও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ও তার বিদ্রোহী মনোভাবের কারণে গণমাধ্যমে সবসময় আলোচনার মধ্যে ছিল এবং ম্যারাডোনার মতো খেলোয়াড় যুগে যুগে নয় শতাব্দীতে আসে। ম্যারাডোনার আজ বিশ্ববাসিকে কাঁদিয়ে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে এবং আমরা এখনো জানিনা পরবর্তী কোন প্রজন্মে এধরনের একজন অসাধারণ খেলোয়াড় আমরা পাব। ম্যারাডোনা শুধুমাত্র একজন ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন না, তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে একজন কিংবদন্তী ফুটবলার হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।
জাহিদ হাসান এমিলিঃ
ম্যারাডোনার মৃত্যুটা পুরো বিশ্বের জন্য একটা বড় ক্ষতি এবং ম্যারাডোনা ফুটবলকে এমন এক স্তরে পৌঁছে দিয়েছে যার কারণে পুরো বিশ্ব আজ তার জন্য শোকাহত। ম্যারাডোনা সবসময় সব জেনারেশনের ফুটবলারদেরকে উৎসাহ ও সাহস প্রদান করেছেন। ছোটকাল থেকেই আমার পরিবারে সাথে আমি যখনই খেলাধুলা করতাম বা খেলা দেখতাম তখন শুধু একজন ফুটবলারের কথাই শুনেছি এবং সে হচ্ছে ম্যারাডোনা। আমার ফুটবল খেলার পেছনে ম্যারাডোনার অনুপ্রেরণা কাজ করেছে এবং তার খেলা দেখার মাধ্যমে আমরা ফুটবলের প্রতি বেশি আকর্ষণ জন্মেছে। তিনি শুধু আমার জন্য কিংবদন্তি নয় পুরো বিশ্বের জন্য একজন জনপ্রিয় কিংবদন্তি এবং ফুটবল খেলার মাধ্যমে তিনি অনেকের হৃদয়ের মাঝে ভালোবাসা অর্জন করেছে।
আবু হাসান চৌধুরি প্রিন্সঃ
২০০৮ সালে আমি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের প্রফেশনাল লীগ কমিটির মেম্বার ছিলাম, তখন আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই বিএফএফের মেম্বার গোলাম রব্বানী হেলালসহ আমি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্রিয়া মন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণের মাধ্যমে ম্যারাডোনার সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাই এবং স্টেডিয়ামে ম্যারাডোনাকে দেখার জন্য লাখ লাখ মানুষ ভিড় করে ছিল। ম্যারাডোনা যখন স্টেডিয়ামে সকলের সামনে তার জার্সি খুলে আকাশে দোল খাওয়া ছিলেন, তখন তিনি বলে উঠেন আমাকে এত মানুষ ভালোবাসে তা আমি কোলকাতায় না আসলে বুঝতাম না। এতো মানুষের ভিড় থাকার কারণে আমরা ম্যারাডোনার সাথে কোন ধরনের ছবি তুলতে পারছিলাম না, পরবর্তীতে ক্রিয়া মন্ত্রীর সহযোগিতায় আমরা ম্যাডামের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হই এবং তার সাথে আমরা ছবি তুলতে সক্ষম। ম্যারাডোনার মতো একজন লিজেন্ডারি ফুটবলারকে কাছে পেয়ে আমরা আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম এবং ম্যারাডোনা এতো বড় মাপের খেলোয়াড় হয়েও তিনি হেলাল ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
মোঃ আব্দুর রাজ্জাকঃ
আমি যখন আরব আমিরাতের মাঠে ফুটবল প্র্যাকটিস করছিলাম, তখন একটি কালো লিমুজিন গাড়ি আসলো এবং সেই গাড়ি থেকে আমাদের প্রিয় খেলোয়াড় ম্যারাডোনা একটি লাল জার্সি পড়ে আমাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। আমি ম্যারাডোনাকে দেখে খুবই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম এবং আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে সম্বর্ধনা জানিয়ে মাঠের দিকে এগিয়ে নিয়ে এসেছি। আমি আমাদের প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেই এবং তিনি সবাইকে বুকে জড়িয়ে স্বাগতম জানিয়েছেন। তার খেলা নিজ চোখে দেখে আমি খুবই অভিভূত হয়ে গেলাম এবং পরবর্তীতে তিনি সবার সাথে লাইন ধরে ছবি তুললেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তিনি কেন বাংলাদেশে আসছেন না এবং তাকে আমি জানিয়েছি বাংলাদেশের মানুষ তার জন্য অনেক পাগল। তিনি আমাকে বলেছেন যে, বাংলাদেশের অনেক স্থানে আমার দেশের পতাকা উড়ে এবং বাংলাদেশের মানুষের মুখে আমার নাম প্রকাশ পায়।
আবু নাইম সোহাগঃ
ছোটকাল থেকেই ম্যারাডোনা আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে এবং ম্যারাডোনা হচ্ছে ফুটবলের একজন কিংবদন্তি অর্থাৎ ফুটবলের রাজা। ২০১৮ সালে রাশিয়ার ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম খেলা ম্যারাডোনার সাথে আমার সাক্ষাত হয় এবং পরবর্তীতে ফাইনাল খেলায় আবার আমার সাথে ম্যারাডোনার সাক্ষাৎ হয় কিন্তু তখন আর্জেন্টিনা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তখন আমি তার সাথে কথা বলি, আর্জেন্টিনা বাতিল হওয়ার কারণে তাকে আমি সমবেদনা জানাই এবং পরবর্তীতে আর্জেন্টিনা আরো ভালো খেলবে সেই কথাটিও বলি। যখন ম্যারাডোনার সাথে আমার প্রথম খেলায় দেখা হয়েছিল তখন তিনি আমাকে মিস্টার বাংলাদেশ বলে সম্বোধন করেছেন এবং পরবর্তীতে যখন ফাইনাল খেলায় তার সাথে আমার দেখা হয় সে আমাকে মিস্টার বাংলাদেশ বলে পুনঃরায় সম্বোধন করেন।