কেমন বাংলাদেশ চাই আরটিভি ২৩২০ ঘটিকা ২৩ নভেম্বর ২০২০
2020-11-23 23:20:00
নূর খান লিটনঃ
এই সংকটের শুরু থেকেই আমাদের বন্ধুপ্রতিম যে দেশগুলো তাদের অনেকেরই বিরোধীতা এবং নিস্ক্রিয়তা লক্ষ্য করছি। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে ভারতের ভূমিকাটা আমরা আশা করছিলা যে অন্ততপক্ষে এই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমাদের পাশে দাঁড়াবে, কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে যে, ভারত কিন্তু আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। আরও একটি বিষয় হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, জাপান, তারাও ভোটদান থেকে বিরত থাকছে, ফলে যে জটিলতা সেটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। সুতরাং, আমাদেরকে কূটনৈতিকভাবে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। আমাদের এখন যেকোনোভাবেই হোক, সম্মানজনকভাবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনটা জরুরি এবং সেজন্য বাংলাদেশকের আরও বেশি কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
ড. শাহা এনাম খানঃ
আপনি যদি রেজুলোশনটা দেখেন, সেখানে উল্ল্যেখ করা হয়েছে যে মায়ানমারের কিছু ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে, এর একটা বড় কারণ হচ্ছে সেখানে রাখাইন বৌদ্ধ যারা আছে তাদের মাঝে একটা নতুন সেন্টিমেন্ট তৈরি হচ্ছে যে রোহিঙ্গারা আজ হোক বা কাল তারা ফেরত আসবে। তাছাড়া যে নির্বাচনটা হয়েগেলো এর দ্বারা একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে। ভারত কেন আমাদের সাথে নেই, কারণ ভারতের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ আছে।
শমসের মুবিন চৌধুরীঃ
এই ইস্যুতে ভারতের চেয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা চীনের। চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সম্পর্ক, চীনের যে ধরনের আধিপত্য রয়েছে মিয়ানমারের উপরে, ভারতের সে ধরনের আধিপত্য বা প্রভাব মিয়ানমারের উপর নেই। চীন যদি এবিষয় আন্তরিক হতো বা থাকে তাহলে বিষয়টা আশার প্রতি অনেক দূর এগিয়ে যেতো কিন্তু চীন সেটা নাকচ করেছে। চীন ও ভারত নিরব, সেটাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, সংখ্যাটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। (২৩:৪৯:৫৫) বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যে তপ্ত ভাষণটা দিয়েছিলেন, জোড়ালো ভাষায় কিছু প্রস্তাব তিনি উত্থাপন করে ছিলেন, তার কোনোটিই কিন্তু সরকার সেইভাবে ফলোআপ করেনি বা করতে পারেনি (২৩:৫০:১২)। যে প্রক্রিয়ায় মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বের করে দিয়েছিল সেই প্রক্রিয়ায় আমার মনে হয়না যে তারা আবার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে।
জুলফিকার আলী মানিকঃ
রেজিস্টার রিফিউজি ক্যাম্প ছাড়া আমাদের দেশে প্রায় ৫ লাখ আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা গত প্রায় ২০ বছর ধরে আছে। এখন যেটা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বা একটা উদ্বেগ আসছে যে রোহিঙ্গাদের দ্বারা এর একটা অবনতি বা সামনে আরও হতে পারে কিন্তু আমরা যদি পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডটা দেখি, তাদের কিছু সংগঠিত র্যাভেল গ্রুপ আছে যাদের সাথে আমাদের বেশ কিছু উগ্রবাদী সংগঠনের অনেক পুরোনো যোগাযোগ। আমাদের এখানে জঙ্গিবাদের যে উত্থান গত দশকে দেখেছিলাম তখন জেএমবি’র যে এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট ছিল, বোমা মিজান নামে যে পরিচিত ছিল, সে বোমা বানানো শিখেছিল রোহিঙ্গার যারা এক্সপার্ট ছিল তাদের কাছে। সুতরাং এগুলো অনেক পুরোনো এবং আমি মনে করি এখন যে ক্যাম্প কেন্দ্রীক সহিংসতা এই উদ্বেগ সামনে আরও বাড়বে। বাংলাদেশের বেশ কিছু ধর্মকেন্দ্রীক রাজনৈতিক দলও তো চায় না রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাক কারণ এখানে তাদের ভোটব্যাংক এর একটা ব্যাপার আছে। ফলে আমাদের জাতীয় ঐক্যেরও কিন্তু অভাব আছে।
আসিফ মুনিরঃ
২০১৭ সালে একটা প্রাইম টাইম ছিল কারণ, তখন এই ইস্যুটা অনেকটা হঠাৎ করেই হাইপ্রোফাইলে চলে এসছিল, তখন যদি আমরা আন্তর্জাতিকভাবে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করা কিংবা আঞ্চলিক, এগুলো বাদ দিয়ে আমরা দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় গেলাম ফলে বিষয়টা একটু ধীর হয়ে গেল। কিছুদিন আগে বর্ডারে মিয়ানমার সেনা মোতায়েন করেছে, আমাদের এয়ারস্পেস পার হয়ে তারা চলে এসেছে, আমরা সেটাকে শুধু পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই শুধু পর্যবেক্ষণ করি বন্ধুপ্রতিম দেশের সাথে এবং মিয়ানমারকেও আমরা বন্ধুপ্রতিম দেশ ভাবি কিন্তু দুইটি দেশের চরিত্র তো আলাদা। নীতিগতভাবে মনে হয় যে বাংলাদেশও এখন স্বীকার করে নিচ্ছে যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কোনো কাজে দেয়নি। এটা একটু ভুল পদক্ষেপ ছিল আশা করি সেটা বুঝে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক জায়গাগুলোকে কিছু কার্যকরী করার একটা প্রক্রিয়া হয়তো থাকতে হবে ভবিষ্যতে।
ওয়ালিউর রহমানঃ
আমার বন্ধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কি করে এটাকে সাইন করলেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে, সে বিষয়ে আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো পাইনি যে তড়িঘড়ি করে কেন করা হলো? ১৯৭১ এর পর আমরা এমন কোনো আন্তর্জাতিক সমস্যার সম্মুখীন হইনি। এখন আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে একটা জোড়ালো ভূমিকা রাখতে হবে, তাদের পরিকল্পনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে বাইরে থেকে লোক এনে যারা এই বিষয়ে পড়াশোনা করেন তাদের এনে আলোচনা করে জাতীয়ভাবে একটা অবস্থান নেয়া উচিত। আমরা আশিয়ানের সাথে একটা সমঝোতায় আসতে পারি এবং তার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে ভারত আমাদের সাথেই আছি কিন্তু কি কারণে যে তারা নিরব আছে সেটা আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের জন্য রোহিঙ্গা একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। ভারতকে আমাদের সর্বোচ্চভাবে ধরতে কারণ আমরা সমস্যা আরও বাড়বে রোহিঙ্গাদের নিয়ে।