করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, নিউজ আওয়ার এক্সট্রা এটিএন নিউজ ২১৩০ ঘটিকা ২১ নভেম্বর ২০২০
2020-11-21 21:30:00
রশিদ ই মাহবুবঃ
বর্তমানে আমাদের দেশে করোনা মহামারী কালীন সময়ের দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে কিনা তা বলার জন্য গবেষণার প্রয়োজন। বর্তমানে মানুষ যে যার অবস্থান থেকে সহনশীল হয়ে উঠেছে। মানুষ বর্তমানে নিজেদের ধৈর্য্য হারা হয়ে পড়ছেন যার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা তাদের পক্ষে দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ঢাকার রাস্তায় বের হলে বোঝা যায় যে মানুষ কতটা অসচেতন। ঢাকার অধিকাংশ মানুষ যারা বাইরে বের হচ্ছেন তারা মাছ ব্যবহার করছেন না অথচ করোনাকালীন সময়ে মাছ পরিধান করা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় এখানে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত যাতে করে সাধারন মানুষ অন্তত বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করে।
অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানঃ
আমি মনে করি আমাদের দেশের মানুষের ভীতু হওয়া উচিত এবং ভয় পাওয়া উচিত। ভয় যদি না পায় তাহলে এদেশের মানুষ সচেতন হতে পারবে না। এছাড়াও এ ধরনের বহু কথা বলা হয়েছে যে, আমাদের দেশে করোনা চলে গেছে এদেশে এখন আর করোনা আসবে না। এই সকল কথা বার্তাগুলো দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে এবং অসচেতন করে তুলেছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে আমাদের দেশে আসবে না এটা আমরা বলতে পারি না। অতঃপর আমার মনে হয় এই মহামারী কালীন সময়ে আমাদের অধিক সচেতন এবং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুদের সর্বদা মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়া উচিত যাতে করোনা সংক্রমণ থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষা রাখতে পারেন।
অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমানঃ
করোনা মহামারীতে বর্তমানে মানুষের ধারণা হচ্ছে আল্লাহ বাঁচালে বাঁচবো না বাঁচবো বাঁচবো না। এখানে সচেতন থাকার কোন বিষয় এখন আর সাধারণ মানুষের মধ্যে বিদ্যমান নেই। আমাদের এপিডেমিক কন্ট্রোল থেকে যে ধরনের প্রচারণামূলক করা হয়েছে তাতে মানুষের আস্থা ভেঙে গেছে। এখন মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য হলেও রাস্তায় নেমে গেছে। যেখানে পেটে খাদ্য নেই সেখানে কাজ করে খেতে হবে। যেখানে সুইজারল্যান্ড এর ৬ কোটি জনসংখ্যার প্রায় প্রতিদিন ৫ লাখ করে টেস্ট করা হচ্ছে সেখানে আমাদের দেশে টেস্ট করা হচ্ছে মাত্র ২০ হাজার। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর সাথে সাথে করোনা টেস্ট এর মাত্রা অধিকহারে বাড়াতে হবে। এতে করে আমরা ধারণা পেতে পারবো বর্তমানের দ্বিতীয় চলছে না এখনো আমরা প্রথমে হতে আটকা পড়ে আছি।
অধ্যাপক ডা. সেজান মাহমুদঃ
করোনা মহামারীতে বিশ্বের এক প্রান্তে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে অন্য প্রান্তে মানছে না। আমি মনে করি এটা ওই দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঘটছে। আমেরিকা থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যেটা হয়েছে সেটা বিশ্বের সবাই জানে এবং এই অস্থিরতা যে দেশে চলবে সেই দেশি কোনভাবেই করোনা প্রতিরোধ করতে পারবে না। করোনা প্রতিরোধ করতে হলে প্রথম শর্ত হলো মাস্ক পরিধান করা এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখা। আমাদের দেশে মাস্ক কেউ ব্যবহার করছে না। একটা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রায় ৭০ শতাংশ করোনা ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করে মাস্ক। অতএব আমাদের অধিক সচেতন থাকা একান্ত জরুরী এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল মাস্ক ব্যবহার করা কারণ এখন পর্যন্ত শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কেউ বলতে পারেনি যে আমরা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছি।
ডা. আনোয়ারুল ইকবালঃ
করোনা নিয়ে কথা বলতে বর্তমানে আবার লজ্জা করে ভয়ও হয়। কিছুদিন আগে এই করোনা মহামারী কালীন সময়ে একটি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয় এবং সেখানে স্টেডিয়াম ভর্তি লোকজন নিয়ে ফুটবল খেলা সম্পন্ন করা হয়। এছাড়া ক্রিকেট বোর্ডও অনেক সময় একই কাজ করেছে। এখানে স্বাস্থ্যসচেতনতা অথবা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না কিন্তু কর্তৃপক্ষের সচেতনতা কোথায়? ভ্যাকসিনের যে বিষয়টি সেখানে যারা ভ্যাকসিন বানাচ্ছেন তারা দুটি করে ভ্যাকসিন বানাচ্ছেন তার মানে, ২৮ দিনের মধ্যে একই ব্যক্তি কে দুবার ভ্যাক্সিনেশন করতে হবে। এখানে হার্ড ইমিউনিটি কথা ভাবতে গেলে আমাদের দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনেশন করতে হবে যেটা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। অতঃপর যেটা আমাদের হাতে রয়েছে সেটা আমরা কেন করছিনা আমরা কেন সচেতন হতে পারছি না এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পারছিনা। স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখায় সরকারের অনেক দারুন একটি সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই ছুটির অপব্যবহার করেছে। হাসপাতালের আইসিইউতে যেমন বেড খালি নেই কক্সবাজারে গেলে হোটেলগুলোতে তেমন রুম খালি নেই। এই করোনা মহামারী কালীন সময়ে মানুষ ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে যেটা আসলেই কাম্য নয়। সাধারণ মানুষকে আমি বলতে চাই আপনারা সচেতন হন নিজে বাঁচুন এবং পরিবারকে বাঁচান।