পরিবার পরিকল্পনার আওতায় আসছে না বেপরোয়া রোহিঙ্গারা
প্রকাশিত: ২০:২৮ ৩ আগস্ট ২০২২ আপডেট: ২০:২৯ ৩ আগস্ট ২০২২

ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
বহুমুখী উদ্যোগ নেয়ার পরও পরিবার পরিকল্পনার আওতায় আসছে না অধিকাংশ রোহিঙ্গারা। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রতি বছর ৩৫ হাজারের বেশি শিশু জন্ম নেয়। দেশে প্রচলিত পরিবার পরিকল্পনা সেবা সেখানে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। তবে তেমন ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে একাধিক এনজিও সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে থাকা বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের পরিবার পরিকল্পনা সেবার আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সরকারের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। কক্সবাজারের উখিয়ায় ইউএনএইচসিআরের অর্থায়নে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরির সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে সম্প্রতি দুর্যোগ ত্রাণ সচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতি বছর কম-বেশি যে হিসাব আছে, তাতে ৩৫ হাজারের মতো নতুন শিশু জন্ম নেয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। দেশের প্রচলিত পরিবার পরিকল্পনা সেবা সেখানে সম্প্রসারিত করার প্রচেষ্টা চলছে।
‘ধর্মীয় অনুভূতি ও নিজেদের দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে মানুষ আর সম্পদে শক্তিশালী হতে চায় রোহিঙ্গারা। তাই তাদের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে আস্থা নেই। তাদের মধ্যে ধর্মীয় ভাবাবেগ বেশি কাজ করে, এ কারণে তারা এটা করতে চায় না। এমনকি তাদের যারা নেপথ্যে পরিচালনা করে তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির পক্ষে নয়।’
১৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লকের বাসিন্দা মৌলনা রিদোয়ান (৪৫), তার রয়েছে ৭ ছেলে মেয়ে ঘরে দুই বউ। একজন থাকেন ক্যাম্পে আরেকজন কক্সবাজার শহরের ভাড়া বাসায়। অবশ্য ত্রাণ গ্রহণের সময় হলে ঠিকই ক্যাম্পে উপস্থিত হন। মৌলানা রিদোয়ান কক্সবাজার শহর তলীর কলেজের পেছনে অবস্থিত রোহিঙ্গা পরিচালিত একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি মানে তার কাছে মহাপাপ। তার ছোট বউ মর্জিনা এখনো প্রসূতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু এনজিও সংস্থা জন্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে কাজ করলেও কিছু এনজিও গোপনে জন্ম নিয়ন্ত্রণবিরোধী ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এমন নয় যে তাদের জোর করে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করানো হচ্ছে। তাদের মোটিভেট করে, বুঝিয়ে এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশাবাদী যে রোহিঙ্গারা নিজেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুখী পরিবার গঠনে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করবেন।
দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা উখিয়ায় একটি স্পেশালাইজড হাসপাতাল করতে যাচ্ছি। যারা বাংলাদেশে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক আছেন তাদের এবং যারা স্থানীয় বাংলাদেশি আছেন, তাদের স্বাস্থ্যসেবা আরো উন্নত করার জন্যই এটা করা হচ্ছে।
‘১৭ হাজার ৫০০ বর্গফুটের এই হাসপাতাল হবে। এখানে কক্ষ সংখ্যা ৬০। চোখের চিকিৎসা, দাঁতের চিকিৎসাসহ অন্যান্য অপারেশন হবে। এখানে টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থাও আছে। এই হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসাগুলো নিশ্চিত করা হবে।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, সারাদেশে আমাদের প্রাইমারি হেলথ কেয়ার, সেকেন্ডারি হেলথ কেয়ার আর টার্সিয়ারি হেলথ কেয়ার- এই তিন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা আছে। প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের সেন্টারগুলো আমাদের গ্রামগঞ্জে অবস্থিত।
রোহিঙ্গা অধ্যূষিত এলাকা তথা পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দীন চৌধুরী ও হোয়াক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব ওষুধ ও কনডম রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হয় সেগুলো রোহিঙ্গারা খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এমন কোনো রোহিঙ্গা পরিবার নেই, যাদের ঘরে ৮ থেকে ১০টি সন্তান নেই।
ডেইলি বাংলাদেশ/আরএম