নিরাময় কেন্দ্রেই মিলল মাদক : নারী পরিচালক করতেন যৌন নির্যাতন
প্রকাশিত: ০২:১৬ ৫ জানুয়ারি ২০২২

ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাব। ছবি : সংগৃহীত
কথায় বলে, রক্ষকই যদি হয় ভক্ষক! তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। সেখান থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ তার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ছিলেন মাদকাসক্ত।
অভিযোগ রয়েছে, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে চলত শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন। কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছে থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। কোনো রোগী তাদের অভিভাবকদের কাছে অভিযোগ করলে তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যেত।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজীপুর জেলা শহরের ভুরুলিয়া কালাসিকদারের ঘাট এলাকায় ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
এ ঘটনায় ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, ওই কেন্দ্র থেকে ৪২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। কেন্দ্রটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সিলগালা করে দিয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিকেলে ওই কেন্দ্রের সামনে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নগরীর ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র নামক একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়।
তিনি বলেন, যেভাবে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা, চিকিৎসা দেওয়া ও রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা তা সেখানে হতো না। এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হতো বলে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে রোগীরা।
তিনি আরো জানান, এখান থেকে শারীরিক নির্যাতনের ফুট প্রিন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে রোগীদের ঝুলিয়ে পিটানো এবং শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে রশি উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, একটি নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন আছে তার অধিকাংশই এখানে মানা হতো না। এ কেন্দ্রে নিন্মমানের খাবার সরবরাহসহ ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য কোনো চিকিৎসক ছিল না। এ কেন্দ্রে যে পরিমান রোগী থাকার কথা তার চেয়ে বেশি রোগী ছিল। ২০০৯ সালে কেন্দ্রটি অনুমোদনহীনভাবে শুরু করলেও পরে তার অনুমোদন নেওয়া হয়। মালিক ফিরোজা নিয়ম-কানুন না মেনে কেন্দ্রটি পরিচালনা করতে থাকেন।
তিনি বলেন, এ কেন্দ্র চিকিৎসার নামে জোরপূর্বক রোগীদের আটকে রাখা হতো। এমনও রোগীও রয়েছেন যিনি তিন বছর ধরে এ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। রোগীরা কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর নির্যাতন করত মালিকের পালিত কর্মচারীরা। এরকম ৫-৭ জন রোগী পাওয়া গেছে যাদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের পছন্দ হলে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হতো।
অপর এক রোগীর মা জানান, তার ১৬ বছরের একমাত্র ছেলে সাত মাস ধরে এ কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এ জন্য তার কাছে দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। ছেলে নিরাময় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে চাচ্ছে না।
ওই কেন্দ্রে থাকা ২৮ জন রোগীকে মঙ্গলবার বিকেলে তাদের পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংকালে গাজীপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ডেইলি বাংলাদেশ/কেবি