পুলিশের সামনেই র্যাব পরিচয়ে করেন ছিনতাই
প্রকাশিত: ০২:২৬ ৮ এপ্রিল ২০২১

মোমেন
কাঁচপুর হাইওয়েতে হঠাৎ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। র্যাব ও পুলিশের পরিচয় দিয়ে যাত্রী ও পথচারীদের বেকায়দায় ফেলে সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে একটি চক্র। চক্রটি দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরে এসেই ছিনতাই ও ডাকাতিতে মেতে উঠেছে।
চক্রটির মূলহোতা মোমেন ওরফে টাইগার মোমেন। অনেকেই তাকে ডাকাত মোমেন নামেও চেনেন। তিনি কাঁচপুরের আমির হোসেনের ছেলে। তার অপরাধের জাল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী, কদমতলী ও সায়েদাবাদের আশপাশ এলাকার অপরাধ জগতের গডফাদারদের কাছে একটি পরিচিত মুখ।
সোনারগাঁও এবং রূপগঞ্জ হয়ে নরসিংদী পর্যন্ত ছিনতাই ও ডাকাতি করে সমস্যা বাড়লে ঢাকার অপরাধ জগতে ঠাঁই নেন টাইগার মোমেন। অপরাধের আমলনামায় হত্যা, ছিনতাই ও অস্ত্র মামলাসহ চল্লিশ বছর বয়সেই টাইগার মোমিন ১৫টিরও বেশি মামলার আসামি। তবু নির্বিকার অপরাধ জগতের এই যুবরাজ।
বাইরে ফিটফাট ও ভেতরে সদরঘাট অবস্থা হলেও টাইগার মোমেন নিজেকে আইনের চোখ থেকে কৌশলে বাঁচিয়ে চলেন। তিনি দিনে মাছ চাষি। রাতে ভয়ংকর ডাকাত ও ছিনতাইকারী। সব সময় পরিপাটি ভাব নিয়ে চলাফেরা তার। পোশাক-পরিচ্ছেদ ও চালচলন দেখলে যে কেউ তাকে পুলিশ বা র্যাব অফিসার কিংবা গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনে করেন। এটাই মোমেনের জন্য প্লাস পয়েন্ট।
একজন পেশাদার ও ভয়ংকর অপরাধী হওয়ার পরও তার চেহারা দেখে কোনোভাবেই আঁচ করা যায় না। যত্রতত্র র্যাব বা পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে কৌশলে ছিনতাই ও ডাকাতি করেন। পুলিশের সামনেই তিনি নিজেকে র্যাব অফিসার পরিচয় দিয়ে ছিনতাই করে সটকে পড়েছেন বেশ কয়েকবার। তার কথা বলার স্টাইল ও বেশভূষা দেখে পুলিশও র্যাব অফিসার ভেবে ঘাঁটাতে চায়নি। মোমেন খুবই ধূর্ত অপরাধী।
র্যাব অফিসারের সামনে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। র্যাব ও পুলিশের কিছু পরিভাষা জানেন। ফলে তাকে সন্দেহ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এমন অভিযোগ কাঁচপুর এলাকাবাসীর।
কয়েক দিন আগের ঘটনা। কাঁচপর সেতুর নিচে ভৈরবের বাস থেকে নামলেন দুই যাত্রী। তাদের সঙ্গে দু-তিনটি ব্যাগ। এ সময় একটি অটোরিকশা এগিয়ে আসে। অটো থেকে নামলেন একজন লম্বা ও হ্যান্ডসাম লোক। নিজেকে র্যাব অফিসার পরিচয় দিয়ে ওই যাত্রীদের গন্তব্য জিজ্ঞেস করলেন। যাত্রী দুজনের ব্যাগ দেখে অফিসার সন্দেহ করলেন। তাদের সামনে পেট্রোল পাম্পের সামনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। কোত্থেকে এসেছেন, কোথায় যাবেন। পেশা কি। ব্যাগে কী আছে। সঙ্গে আর কি কি আছে। জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কিনা।
নানা প্রশ্নের জেরার মুখে যাত্রী দুজন ওই অফিসারের কাছে নিজেদের সঙ্গে থাকা মানিব্যাগ ও টাকা পয়সা তুলে দেন। র্যাব অফিসারের সন্দেহ দূর হয় না। একপর্যায়ে ওই অফিসার বলেন, আপনাদের গতিবিধি সন্দেহজনক। আপনাদের আমাদের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এ বলে তাদের অটোরিকশায় তুলে চলে যান র্যাব অফিসার।
কিছু দূর গিয়ে যাত্রী দুজনকে মারধর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সবকিছু রেখে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দেন। পরে কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ডে ঘটনা জানাজানি হয়। রাতে ভৈরবের দুই যাত্রীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকাসহ সর্বস্ব ছিনতাই হয়েছে। ছিনতাইকারীরা র্যাব পরিচয় দিয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, আতঙ্কের এক নাম মোমেন ডাকাত। ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। কিছু হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় দেখান মোমেন।
সম্প্রতি পুলিশেরই একটি বিশেষ বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে টাইগার মোমেনের অপকীর্তি। মামলার তালিকা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে পুলিশ। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হত্যা, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ প্রায় ১৫টি মামলার আসামি টাইগার মোমেন।
ডেইলি বাংলাদেশ/এমআর