এখন আর খেলতে বাধা নেই
প্রকাশিত: ১৭:৪১ ২৪ জানুয়ারি ২০২১

মুক্তমনে স্বাধীনভাবে খেলছে সুমাইয়া ও পরিমণি
ছোট্ট শিশু সুমাইয়া জাহান রশনি ও পরিমণি। তারা মনের আনন্দে নিজ বাড়ির সামনে খেলাধুলা করছে। অথচ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আগে খেলতে পারতো না, ছিল অনেক বাধা-বিপত্তি। কিন্তু এখন আর সেই বাধা নেই। মুক্তমনে স্বাধীনভাবে খেলছে তারা।
সুমাইয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের মোগড়া বাজার এলাকায়। সে সালেহা খাতুন দাখিল মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আর পরিমণি একই ইউনিয়নের ধাতুরপহেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।
সুমাইয়া ও পরিমণি জানায়, তাদের কোনো স্থায়ী বসতঘর ছিল না। তাদের বাবা-মা অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সেই ঘরও ছিল ভাঙাচোরা। থাকতে খুবই কষ্ট হতো। বাড়িওয়ালার ছেলে-মেয়েসহ আশপাশের শিশুরা সব সময় খেলাধুলা করত। কিন্তু গরিব বলে তাদের সঙ্গে কেউ শিমতো না। এমনকি বাড়ির উঠানে খেলতে গেলেই বাধা দিতেন বাড়িওয়ালা। তখন খুবই কষ্ট হতো।
তারা বলে, আমাদের কষ্ট দেখে মা-বাবার কান্না ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এখন আর কেউ আমাদের বাধা ও গালমন্দ করতে পারবে না। তাই মনের আনন্দে খেলা করছি।
মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পেয়েছে সুমাইয়া ও পরিমণির পরিবার। সেই বাড়ির সামনে রয়েছে তাদের খেলার জায়গাও। আছে অনেক খেলার সাথীও।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলায় স্বপ্নের ঠিকানা পেয়েছে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৪৫টি পরিবার। গতকাল শনিবার উপকারভোগী প্রত্যেক পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বাড়ির দলিল।
আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে সুমাইয়া জাহান রশনি বলে, আমরা গরিব বলে সবাই অবহেলা করত। কেউ আমার সঙ্গে মিশতে ও খেলতে চাইত না। অন্যের বাড়িতে খেলাধুলা করতে দিত না। সারাক্ষণ বাড়িতে বসে থাকতে হতো।
পরিমণি বলে, বাড়িতে একপ্রকার গৃহবন্দি ছিলাম। বাড়ির আশপাশের লোকজন মিশতো না। চাচার বাড়িতে গেলে চাচা-চাচিও তাড়িয়ে দিতেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাড়ি দিয়েছেন। এখন আর খেলায় কোনো বাধা নেই।
পরিমণির বাবা লিটন মিয়া বলেন, উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের তুলাবাড়ি গ্রামে আমাদের বাড়ি। পৈতৃকভাবে পাওয়া আধা শতাংশ জমি ছিল। কিন্তু সেই জমিটুকুও ভাইয়েরা আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছেন। বাধ্য হয়ে বাড়ির পাশে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। সেই ঘরটিও ছিল ভাঙাচোরা। থাকার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। বর্ষাকালে ঘরে পানি পড়তো। আর শীতকালে হিমেল হাওয়ায় ঘরে ঘুমাতে পারতাম না।
তিনি আরো বলেন, ঝালমুড়ি বিক্রি করে কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতাম। অনেক সময় ঘর ভাড়া দিতে পারতাম না। সেজন্য বাড়িওয়ালা অনেক কথা শুনাতেন, ঘর ছেড়ে দিতে বলতেন। আমার মেয়েটাকে কেউ খেলায় নিত না। বাবা হিসেবে মেয়ের এ কষ্টে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। সন্তানদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে পারছিলাম না। আমি পাকাঘরে থাকতে পারব কখনো কল্পনাও করিনি। কিন্তু আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আল্লাহ যেন প্রধানমন্ত্রীকে নেক হায়াত দান করেন।
সুমাইয়া জাহান রশনির মা রহিমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী শ্রমিকের কাজ করেন। সামান্য আয়ের সংসার আমাদের। ভাঙাচোরা ঘরে খেয়ে না খেয়ে কোনরকমে দিনাতিপাত করতাম। গরিব বলে সবাই অবজ্ঞা করতো।
তিনি বলেন, আমাদের মতো গরিবদের দিকে তাকিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন আর আমাদের কোনো বাধা নেই। সন্তানরা নিজেদের মতো করে চলতে পারছে।
বিধবা মাজেদা বেগম বলেন, আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পেতাম তাই দিয়েই জীবন চলতো। থাকার মতো কোনো ঘর ছিল না। অন্যের বাড়িতে থাকতে হতো। এখন একটি পাকাঘর পেয়েছি।
ডেইলি বাংলাদেশ/এমআর