প্রেম থেকে বিয়ে, জঙ্গিবাদের ফাঁদে পড়ার গল্প শোনালেন আসমা
প্রকাশিত: ১৭:১৪ ১৪ জানুয়ারি ২০২১

আবিদা জান্নাত আসমা ওরফে রাইসা
আবিদা জান্নাত আসমা ওরফে রাইসা। ১৮ বছরের এই তরুণী ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করেন। ফেসবুকে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় থেকে প্রেম। সেই প্রেম থেকে পরিবারের অগোচরে পালিয়ে প্রেমিককে বিয়ে করেন। এরপর বিদেশে পড়তে যান। এরই মধ্যে স্বামীর উৎসাহে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন আসমা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়া এই তরুণী জঙ্গিবাদের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার গল্প সবাইকে শুনিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার নয়জন জঙ্গিবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের একজন হচ্ছেন আসমা ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি বেনজীর আহমেদের কাছে আত্মসমর্পণের পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে এই তরুণী বলেন, ফেসবুকে পরিচয়, প্রেমের সূত্র ধরে ২০১৮ সালে বাবা-মায়ের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করি। পরবর্তীতে পড়াশোনার জন্য চলে চাই দেশের বাইরে। সে সময় স্বামীও আমার সঙ্গে দেশের বাইরে চলে যান। মূলত তারই পরিকল্পনা অনুযায়ীই সব কিছু হয়। কিন্তু আমার পরিবার জানতো না।
তিনি আরো বলেন, ছয় মাসের মতো দেশের বাইরে ছিলাম আমরা। এরপর আবার দেশে ফিরে আসলেও আমার পরিবার জানতো না। দেশে ফেরার পর আমি আর আমার স্বামী প্রায় দেড় বছর বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিলাম। ওই সময় আমার স্বামী একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে টের পাই। আমি জানার পর স্বামী আমাকেও তার সঙ্গে যোগ দিতে বলে। জঙ্গিবাদে সাহায্য করতে বলে। স্বামীর কথা শুনে আমিও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ি।
তরুণী আসমা বলেন, জঙ্গিবাদের পথ যে ভুল তা ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারি। এটা স্বাভাবিক জীবন নয় এবং এই পথ বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা-স্নেহ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তাই অনেক কষ্টে জীবনযাপন করতাম। ধর্মের নামে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যে মানুষটি আমাকে জীবনসঙ্গী করে নিয়েছিল। সে মানুষটিও অনেক কষ্টে জীবনযাপন করতে থাকে। সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। নিজেকে খুব অসহায় লাগতে শুরু করে।
একপর্যায়ে আমি ওই পথ থেকে ফিরে আসতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিই। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আজ আত্মসমর্পণ করি। এটি শুধুমাত্র র্যাবের সহযোগিতার কারণে সম্ভব হয়েছে।
দেশের তরুণদের উদ্দেশ্যে জঙ্গিবাদ ছেড়ে আসা এই তরুণী বলেন, আমি অবশেষে বুঝতে পেরেছি, আমি ভুল পথে ছিলাম। আমি চাই না, আমার মতো আর কেউ ভুল করুক। এ পথে পা না বাড়িয়ে সবাই যেন সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। আমি আমার পলাতক স্বামীকেও ভুল পথ থেকে ফিরে আসার আহ্বান করছি। সবারই উচিত, নিজের আত্মিক ও মানসিক পরিচর্যা করা। নিজের প্রতি নিজের বিবেচনা থাকা। কোনো কিছু অন্ধভাবে বিশ্বাস না করা।
মেয়েকে ফিরে পেয়ে আসমার মা শাহিদা সুলতানা বলেন, আমরা আসমাকে ছোটবেলা থেকেই অনেক ভালোবাসতাম। আমাদের মেয়ে যাকে পালিয়ে বিয়ে করেছে সে একজন জঙ্গী। সে আমাদের মেয়েকেও জঙ্গি বানিয়েছে। একজন জঙ্গির মা হওয়া অনেক কষ্টের। আমি সব মা-বাবাকে অনুরোধ করবো, আপনাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখার পাশাপাশি যথেষ্ট সময় দিন। এটা সবচেয়ে আনন্দের যে, মেয়ে ভুল বুঝতে পেরে আজ আমার কাছে ফিরে এসেছে।
ডেইলি বাংলাদেশ/এমকেএ