সিনেমাকেও হার মানিয়েছে আর্নল্ড, শিরোপা অর্জন করলো হুইলচেয়ারে বসে
প্রকাশিত: ১৭:৩১ ২২ জানুয়ারি ২০২১ আপডেট: ১৭:৩৯ ২২ জানুয়ারি ২০২১

ছবি: আনন্দ আর্নল্ড
মানুষ কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় আর মনোবল দিয়েই পৃথিবী জয় করেছে। এর অনেক প্রমাণ রয়েছে আমাদের সমাজে। এমনকি জন্মগতভাবে কিংবা দুর্ঘটনাজনিতভাবে অনেকেই শরীরের একটি অঙ্গ হারিয়ে জয় করেছেন পৃথিবী।
স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করেন। এমন অনেকের কথাই তো জেনেছেন। আজ এমন একজন অদম্য মনোবলের মানুষের কথা জানাবো যিনি মনের জোড়েই নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিশ্ব জয় করেছেন। নাম তার আনন্দ আর্নল্ড। আনন্দ আর্নল্ড ৩০ বছর বয়সী ভারতীয় ব্যায়ামবিদ যার মাথায় রয়েছে তিনবার মিস্টার ইন্ডিয়া, সাতবার মিস্টার নর্থ ইন্ডিয়া এবং ১২বার মিস্টার পাঞ্জাব খেতাবের শিরোপা। তবে এই সমস্ত শিরোপাই আর্নল্ড অর্জন করেছেন হুইলচেয়ারে বসে।
ভারতের একমাত্র ও প্রথম প্রতিবন্ধী ব্যায়ামবিদের নাম আর্নল্ড আনন্দ। তবে তার এই প্রতিবন্ধকতাই তার শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেরুদন্ডের ক্যান্সারে আর্নল্ডের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে। তবে শরীরচর্চায় তার অদম্য আগ্রহ তাকে টলাতে পারেনি কোনোভাবেই। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি শুরু করেন শরীরচর্চা। সেই বছরই তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেতাব মিস্টার গোল্ডেন লাভ করেন তিনি। তবে তার দুবছরের মধ্যেই ধরা পড়ে ভয়ঙ্কর মেরুদন্ডের ক্যান্সার। প্রথম যখন শরীরচর্চা শুরু করেন তখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থই ছিলেন।
তবে মিস্টার গোল্ডেন উপাধি পাওয়ার পরেই শুরু হয় তীব্র পিঠের যন্ত্রণা। হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরেই ধরা পড়ে এই ভয়ঙ্কর অসুখ। আর্নল্ডের মা তার ছেলেকে জানান এবার থেকে তাকে হুইল চেয়ারেই চলাফেরা করতে হবে। এরপর এক কঠিন অস্ত্রোপচার হয় আর্নল্ডের মেরুদন্ডে। যার ফলে ঘাড় থেকে দেহের নিম্নাংশ সম্পূর্ণ অবশ হয়ে যায়। শুধুমাত্র তার হাতেই কিছুটা সাড় ছিল। তবে থেমে থাকেননি তিনি। সমস্ত বাধাকে পেরিয়ে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র পরিবারের পাশে থাকায়। আর্নল্ডের দিদি আইরিন আনন্দ এই সময়ে তার ভাইয়ের সম্পূর্ণ দেখভালের দায়িত্ব নেন।
তবে মিরাকল ঘটে যাওয়ার পর। আর্নল্ডের এক বন্ধু অমিত গিল তাকে সঙ্গে করে জিমে নিয়ে যান। সেখানে সামান্য ব্যায়াম করতেই তিনি দেখেন যে তার পেশীগুলো আবার কাজ করতে শুরু করেছে। এরপর মাত্র একমাসের মধ্যেই আবার তার পেশীগুলো তিনি আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। তবে শরীরের উপরের অংশে সাড় ফিরে এলেও নিম্নাংশ বরাবরের মতোই অবশ হয়ে যায় আর্নল্ডের।
যার জীবন একটি রোমাঞ্চকর সিনেমার গল্পের চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয়, সেই আর্নল্ড ইতিমধ্যে একটি সিনেমায় অভিনয়ও করে ফেলেছেন। মোহন দাস নামে এক চিত্র পরিচালক তারই জীবন নিয়ে বানিয়েছেন এক তথ্যচিত্র। সেখানেই অভিনয় করতে দেখা গেছে তাকে। আর্নল্ড ভবিষ্যতে বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য একটি জিম খুলতে চান। আর্নল্ডের ভবিষ্যতের এই স্বপ্নও নিশ্চয়ই সত্যি হবে অন্যান্য স্বপ্নগুলোর মতোই।
ডেইলি বাংলাদেশ/কেএসকে