খুন করে যেভাবে ৩০ বছর লুকিয়ে ছিলেন ২৮ সিনেমার অভিনেতা
প্রকাশিত: ১১:৪০ ৫ আগস্ট ২০২২ আপডেট: ১১:৪১ ৫ আগস্ট ২০২২

ওম প্রকাশ- ছবি: সংগৃহীত
৩০ বছর ধরে ডাকাতি ও খুনের অভিযোগ নিয়ে পালিয়ে থাকা ভারতের সাবেক সেনাবাহিনীর ট্রাকচালক ওম প্রকাশকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। তিনি ভারতের উত্তরাঞ্চলের হারিয়ানা রাজ্যের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামিদের অন্যতম একজন ছিলেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওম প্রকাশ পাশা নামেও পরিচিত ছিলেন। হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি তার প্রতিবেশি রাজ্য উত্তর প্রদেশের সমতল ভূমিতে নতুনভাবে জীবনযাপন শুরু করেন। তিনি নতুন পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিলেন। সেখানে স্থানীয় নারীকে বিয়ে করে তিনজন সন্তানকে বাবাও হন তিনি।
কিন্তু এ সপ্তাহের শুরুতেভাগ্য খারাপ হওয়ায় ৬৫ বছরের ওম প্রকাশ তার নতুন বাসস্থান গাজিয়াবাদ শহরের বস্তি থেকে গ্রেফতার হন।
পুলিশ বলছে, গ্রেফতারের আগে ওম প্রকাশ বিভিন্ন ছদ্মবেশে পার্শবর্তী গ্রামগুলোতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভক্তিমূলক গানের দলের ট্রাক চালাতেন। এমনকি ওম স্থানীয় কম বাজেটের ২৮ সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন।
হারিয়ানা স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের সাব ইন্সপেক্টর ভিভেক কুমার জানান, ওম প্রকাশকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং তিনি তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তাকে মূলত ১৯৯২ সালের একটি হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওম প্রকাশকে গ্রেফতারের দুদিন পরই তিনি খবরের শিরোনামে আসেন।
ওম প্রকাশের স্ত্রী রাজকুমারী বলেন, ২৫ বছরের সংসার জীবনে তিন সন্তানের মা হয়েছি। এর মধ্যে আমার ২১ বছরের একটি ছেলে এবং ১৪ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
রাজকুমারী তার বেডরুমের তোশকের নিচ থেকে স্বামীর বিরুদ্ধে থাকা অপরাধের বিস্তারিত বর্ণনা সমৃদ্ধ একটি পত্রিকা বের করে সাংবাদিকদের দেখান। তিনি বলেন, স্বামীর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ শুনে তারা (পরিবার) স্তম্বিত হন।
রাজকুমারী অভিযোগ করে বলেন, তিনি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমি তাকে ১৯৯৭ সালে বিয়ে করি। তখন আমি জানতাম না তিনি বিবাহিত ও তার একটি পরিবার ছিল।
ভিভেক কুমার বলেন, ওম প্রকাশ হারিয়ানার পানিপথ জেলার নারায়না গ্রামের একজন বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ভারতের সেনাবাহিনীর সিগনাল কোরে ১২ বছর ট্রাক চালক হিসেবে কাজ করেন। চার বছর অনুপস্থিত থাকায় তাকে ১৯৯৮ সালে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। হত্যার অভিযোগের আগেও ওম প্রকাশের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ ছিল। ১৯৮৬ সালে তার বিরুদ্ধে কার চুরির অভিযোগ ছিল। এর চার বছর পর তার বিরুদ্ধে মোটরবাইক, সেলাই মেশিন ও স্কুটার চুরিরও অভিযোগ উঠেছিল। এসব অপরাধ বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত হয়েছিল। প্রতিটি ঘটনায় গ্রেফতারের পর জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও একই ঘটনা ঘটাতেন ওম।
১৯৯২ সালে ওম ও তার সহযোগী একটি মোটরবাইক ডাকাতির চেষ্টা করেন। যখন মোটরবাইক আরোহী ডাকাতি বাধা দেন তখনই তারা তাকে ছুরিকাঘাত করে। ঐ সময় স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে এগিয়ে এলে ওম ও তার সহযোগী বাইক রেখে পালিয়ে যায়। তবে ওমের সহযোগীকে ধরার পর তিনি আট বছর জেলে ছিলেন। পরে তিনি জামিনে বের হন। এরপর ওম প্রকাশও নিরুদ্দেশ হন। এতে সেই মামলা শিথিল হয়ে পড়ে। তখন পুলিশ তাকে পলাতক আসামি হিসেবে ঘোষণা করে।
ওম হত্যার পর পাঁচ বছর তামিল নাডু এবং অন্ধ্রপ্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মন্দিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এক বছর পর উত্তর ভারতে ফেরত আসেন। তবে বাড়ি ফেরার বদলে তিনি ১৮০ কিলোমিটার দূরে গাজিয়াবাদ বসতি স্থাপন করে ফেলেন।
রাজকুমারী জানান, ওম প্রকাশকে মানুষ বাজরাং বালি অথবা বাজরাঙ্গি হিসেবে চিনতেন। ১৯৯০ সালে একটি দোকান দেন এবং সেখান থেকে ভিডিও ক্যাসেট বিক্রি ও ভাড়া দিতেন। তাকে সৈনিক আঙ্কেল বা ফাউজি তাও ডাকা হতো।
২০০৭ সাল থেকে তিনি স্থানীয় হিন্দি ভাষার সিনেমায় ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন। সিনেমাগুলোতে তিনি গ্রাম প্রধান, ভিলেন, পুলিশের কনস্টেবল চরিত্রে অভিনয় করতেন। তার অভিনীত ‘তাকরাভ’ সিনেমাটি ৭.৬ মিলিয়ন মানুষ ইউটিউবে দেখেছেন। আর এ সিনেমার ক্লিপ দেখেছেন অনেক মানুষ।
ভিভেক কুমার বলেন, তিনি নতুন ভোটার ও আধার কার্ড সংগ্রহ করেছিলেন। তবে ওম প্রকাশ একটি বড় ভুল করে ফেলেন। তিনি তার আসল নাম এবং তার বাবার নাম হুবহু রেখে দেন।
এদিকে, ওম প্রকাশের নতুন পরিবার তার অতীত অপরাধ সম্পর্কে অবগত ছিল না। তবে বিয়ের পর রাজকুমারী বুঝতে পারেন যে তার স্বামী কিছু গোপন করছিলেন। ওম তাকে নিয়ে নারায়না গ্রামে গিয়েছিলেন এবং তার ভাইদের ও তাদের পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করেন দেন। তখন তিনি তাদের বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
রাজকুমারী বলেন, একদিন আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রী বাড়িতে এসে গন্ডগোল করলে তার আগের পরিবার সম্পর্কে জানতে পারি। আমি ও আমার প্রতিবেশীরা তার অন্য জীবন সম্পর্কে নতুনভাবে জানি। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলেকে গোপন করে রেখেছিলেন আমাদের কাছে।
ডেইলি বাংলাদেশ/এমকেএ