‘রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ’ গ্রন্থ প্রসঙ্গে
প্রকাশিত: ১২:১৩ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

তরুণ গবেষক ও লেখক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আল-আমিন
বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে কিভাবে মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসা যায়, কিভাবে তাদের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ভূমিকা পালন করতে পারে সেসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গবেষণা হয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রাখাইনরা যে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার জন্য পিছিয়ে আছেন সেসব নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। দেশে এই কাজটিই প্রথম করেছেন তরুণ গবেষক ও লেখক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আল-আমিন।
তার ‘রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ’ বইটিতে উঠে এসেছে রাখাইনদের বাংলাদেশের রাজনীতি, সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক অধিকার এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে যে জ্ঞান, ধারণা রয়েছে তা বাঙালি সম্প্রদায়ের তুলনায় নিম্নমুখি। আবার রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে যে মাধ্যমসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা বাঙালিদের মতো নয়। ফলে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
বইটি সম্পর্কে লেখক মো. আল-আমিন বলেন, পৃথিবীর সব সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে পরিবার, সঙ্গী, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে কাজ করলেও রাখাইনদের ক্ষেত্রে ভিন্ন। বাঙালিদের বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে যেরকম ধারনা রয়েছে রাখাইনদের তা একেবারে নেই বললেই চলে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তাদের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে সাব-কালচার (উত্তরাধিকারসূত্রে ধ্যান ধারণা) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেটা বাঙালিদের ক্ষেত্রে কম। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে রাখাইনদের যে শূণ্যতা রয়েছে সে শূন্যতা পূরণ করতে পারে রাজনৈতিক দল।
আবার শুধু যে বিভিন্ন মাধ্যম এই রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে তা নয়। রাখাইনদের মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদেরও অনেক দুর্বলতা রয়েছে। তারা নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায়। এটা করলে তারা রাজনৈতিকভাবে অ্যাফিলিয়েটেড হতে পারছে না। এই বিষয়টা যতদিন থাকবে ততদিন রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে। রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানেই হচ্ছে অধিকার থেকে পিছিয়ে পড়া। এটা তাদের একটি ক্ষয়িষ্ণু জাতিতে পরিণত করবে।
বইয়ের সারসংক্ষেপ:
গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে গবেষণার বিষয়বস্তু, উদ্দেশ্য, গবেষণা পদ্ধতি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের একটি তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক বিষয়ে জ্ঞান এবং এই জ্ঞান অর্জনে মাধ্যমগুলোর ভূমিকা বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য বিচার-
বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা গেছে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে অধিকাংশরই জ্ঞান সীমিত। তবে স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল, রামুর বৌদ্ধ বিহারে হামলা সম্পর্কে অধিকাংশরই জ্ঞান রয়েছে। জ্ঞানের উৎস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পরিবার রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রাথমিক মাধ্যম হলেও বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক বিষয়ে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। আবার সঙ্গীদলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র লক্ষ করা যায়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলও তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করে না। তবে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যম তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সর্বশেষে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে সার্বিক বিবেচনায় বলা যায় যে, বাংলাদেশের অন্যান্য নৃগাষ্ঠেীর মতো রাখাইন সম্প্রদায়েরও রাজনৈতিক বিষয়ে জ্ঞানের মাত্রা স্বল্প। রাজনৈতিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সবগুলো মাধ্যমের ভূমিকা থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এক্ষেত্রে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক (Demographic) চলকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
‘রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ’ বইটি প্রকাশ করেছে মেরিট ফেয়ার প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন আককাস খান। বইটি পাওয়া যাচ্ছে মেরিট ফেয়ার প্রকাশন, ১২ বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০ এবং রকমারি অনলাইন শপে। বিনিময় মূল্য ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা।
লেখক পরিচিতি
মো. আল-আমিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২০১৫ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি একই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন।
ডেইলি বাংলাদেশ/জেডএম