বসন্ত বিদায়ে মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা
প্রকাশিত: ১৫:৩৯ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১

কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, ছবি: সংগৃহীত।
১৯০৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাবনা শহরের নিয়াজতবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা।
তিনি মূলত কবিতাই লিখেছেন। স্বভাবজাত প্রেরণায় অনবরত কবিতা লিখেছেন এবং সেগুলো সমকালীন সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার কাব্যপ্রতিভা হয়তো তার কর্মখ্যাতির সমতুল্য ছিল না, কিন্তু নিষ্ঠা ও প্রয়াস তাকে রবীন্দ্রানুসারী কবিদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট আসনে সমাসীন করেছে।
মাহমুদা খাতুন সনেট এবং গদ্যছন্দেও কিছু কবিতা রচনা করেছেন। প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং মানুষ ও সমাজ তার কবিতায় ঘুরে ফিরে এসেছে। কখনো সাময়িক প্রসঙ্গ হয়েছে তার কবিতার বিষয়বস্তু। দুই মহাযুদ্ধের তা-বলীলা তাকে শান্তির অনিবার্যতায় আস্থাশীল করেছে। তাই শান্তির স্বপক্ষে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন উদাত্ত কণ্ঠে। যেহেতু তার কাছে কবিতা ছিল ‘হৃদয়ের বিশুদ্ধ উচ্চারণ’, সেহেতু তার নিজের কবিতাও ছিল মৌলিক এবং এক প্রশান্ত গতিপথে প্রবাহমান।
১৯৩০-এর দশকের শুরুতে কবি হিসেবে মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার আত্মপ্রকাশ। তার প্রথম কবিতার বই ‘পশারিনী’ প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে। এই বই সম্পর্কে সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের মন্তব্য- ‘বাংলা ভাষায় মুসলিম (মহিলা) কবির ইহাই প্রথম প্রকাশিত আধুনিক কবিতার বই। এতে তিনি প্রকৃতি, প্রেম ও বিরহ নিয়ে কতকগুলো কবিতা লিখেছেন।’
বসন্ত বিদায় কবিতায় মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা লিখেছেন- বসন্ত উৎসব আজ হয়ে গেছে শেষ/পড়ে আছে বাসি ফুল-মালা,/রিক্ত ভূষা উদাসিনী ধরণীর বুকে/জাগে শুধু বুক ভরা জ্বালা।
মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার কবিতায় মানুষের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার আন্তরিক প্রকাশ ঘটেছে। প্রকৃতির রূপবৈচিত্র তার কবিতায় প্রাণের স্পর্শ লাভ করেছে। অত্যন্ত অল্প বয়সে কবি প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে।
তিনি কেবল কবিতাই লিখতেন না, ‘শান্তি’, ‘দীপক’ ও ‘সবুজ বাংলা’ প্রভৃতি পত্রিকায় তার বেশ কয়েকটি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছিল। দুই শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলামের সঙ্গে মাহমুদা খাতুন যোগাযোগ করেন। তাদের আশীর্বাদ ও অনুপ্রেরণা পান। ‘পরিচয়’ প্রকাশের জন্যে মাহমুদা রবীন্দ্রনাথকে একটি কবিতা পাঠিয়েছিলেন, কবিতা পেয়ে প্রাপ্তি স্বীকার করে রবীন্দ্রনাথ তাকে লেখেন-
মাহমুদা খাতুনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। আকৈশোর ছবি আঁকার প্রতি তার ঝোঁক ছিল। পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যরক্ষা ও রন্ধনশিক্ষায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন। পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যচর্চার অনুকূলে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখা ‘বসন্ত’ নামক কবিতায় লিখেছেন- আজি কত দিন পরে/বসন্ত আইল ঘরে/চারিদিক সাজাইয়া/ঢোলবাদ্য বাজাইয়া/ফুলের সাজে আইলরে/বসন্ত আবার ঘরে/জুঁই বেলি চারিদিকে/বসন্ত মাঝারে থাকে/কচি কচি পাতা ফোটে/বসন্ত বাহার উঠে।
দেশ বিভাগের পূর্বে কোলকাতা থেকে প্রকাশিত মানসী ও মর্ম্মবাণী, উদয়ন, বসুমতি, প্রদীপ, কিষাণ, অগ্রগতি, সওগাত, মোহাম্মদী, বুলবুল, আজকাল, দীপালি, জয়ন্তী, বঙ্গলক্ষ্মী, উত্তরায়ণ, গুলিস্তান, যুগান্তর, মোয়াজ্জিন, আনন্দবাজার [পত্রিকা], বেগম, নবশক্তি, নবযুগ, স্বাধীনতা, নায়ক, সত্যযুগ, পুষ্পপত্র ইত্যাদি পত্রিকায় আমার লেখা বের হয়েছে।’
ডেইলি বাংলাদেশ/জেডএম