অতুল প্রসাদ সেনের ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত: ১৫:২৬ ২৬ আগস্ট ২০২১ আপডেট: ০৯:৫৯ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট ভারতের লক্ষ্ণৌতে মারা যান তিনি
অতুল প্রসাদ সেন। তার নামের শুরুতে অনায়াসে যোগ করা যায় কবি, গীতিকার, গায়ক, সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পঞ্চকবিদের একজন। তার সমাধীর দেখা মিলবে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের কাওরাইদ গ্রামে সুতিয়া নদীর তীরে।
জীবন:
তারা নানা ছিলেন ভাওয়াল জমিদার কালীনারায়ণ গুপ্ত। তার মেয়ে হেমন্তশশীর ছেলে অতুলপ্রসাদ সেন। ১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর কালীনারায়ণের ঢাকার বাড়িতে অতুলের জন্ম হয়। বাবার বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মগর গ্রামে।
অতুল প্রসাদ ১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পাস করেছেন। কলেজজীবন শেষে করেছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৮৯২ সালে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভের উদ্দেশে লন্ডনে পড়েছেন। ১৮৯৪ সালে ফিরে আসেন। এরপর রংপুর ও কলকাতায় আইন পেশায় অনুশীলন শুরু করেন। পরে ভারতের লক্ষ্ণৌ চলে যান। কিছুদিন পর বড়মামা কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত সেখানে চলে আসেন। মামাতো বোন হেমকুসুমের মঙ্গে অতুলের প্রেম হয় এবং তিনি হেমকুসুমকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
তখন ভারতবর্ষের আইনে ভাই-বোনে এরকম বিয়ে গ্রহণযোগ্য ছিল না। আর এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে ওঠে প্রবল আপত্তি। অতুলপ্রসাদ তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। ব্যারিস্টার অতুলপ্রসাদ কর্মগুরু সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহের পরামর্শক্রমে স্কটল্যান্ডে চলে যান। যেখানে এরূপ বিবাহ আইনসিদ্ধ ছিল। স্কটল্যান্ডে গিয়ে ১৯০০ সালে হেমকুসুমকে বিয়ে করেন অতুল।
সাহিত্য:
‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা’ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ে এই কবিতাটির কথা কার না মনে পড়ে?
অতুল বাংলা গানে ঠুংরি ধারার প্রবর্তক। গীতিগুঞ্জ (১৯৩১) গ্রন্থে তার সমুদয় গান সংকলিত হয়। এই গ্রন্থের সর্বশেষ সংস্করণে (১৯৫৭) অনেকগুলি অপ্রকাশিত গান প্রকাশিত হয়। তার গানের সংখ্যা ২০৮টি। এর মধ্যে মাত্র ৫০-৬০টি গান গীত হিসেবে প্রাধান্য পায়।
তার কয়েকটি বিখ্যাত গান হল- ‘মিছে তুই ভাবিস মন’, ‘সবারে বাস রে ভালো’, ‘বঁধুয়া নিঁদ নাহি আঁখিপাতে’, ‘একা মোর গানের তরী’, ‘কে আবার বাজায় বাঁশি’, ক্রন্দসী পথচারিণী ইত্যাদি।
তার ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’ গানটি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশেষ অণুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
এই মাতৃভাষাপ্রেমপূর্ণ সঙ্গীতটি বাঙালির প্রাণে আজও ভাষাপ্রেমে গভীর উদ্দীপনা সঞ্চার করে এবং গানটির আবেদন আজও অম্লান। অতুলপ্রসাদের গানগুলি দেবতা, প্রকৃতি, স্বদেশ, মানব ও বিবিধ নামে পাঁচটি পর্যায়ে বিভক্ত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানের বিশেষ গুণগ্রাহী ছিলেন। অতুলপ্রসাদী গান নামে পরিচিত এই ধারার একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী হলেন কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘খামখেয়ালী সভা’র সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তাঁর সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। বিলেত ফেরত অতুলপ্রসাদ কোলকাতার উচ্চবর্গের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। শিল্প ও সৃজন জগতের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটে ‘খামখেয়ালী সভা’র সদস্য হওয়ার সুবাদে।
রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, বাউল, কীর্তন, ঠুমরি, রাগপ্রধান সব ধরণের সুর, তাল, লয়ের সমন্বয়ে আজন্ম তিনি এক স্বতন্ত্র সঙ্গীতের সাধনা করেছেন। সে কারণেই সমকালীন গীতিকারদের তুলনায় সীমিত সংখ্যক সঙ্গীত রচনা করেও বাংলা গানের জগতে অতুলপ্রসাদ নিজস্ব একটি আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন।
তার রচিত গান দীর্ঘকাল ধরে বাঙালি শ্রোতার মর্মস্পর্শী হয়ে আছে। বাউল ও কীর্তনের সুরের যোগসাধন করে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে হিন্দুস্থানী ঢঙের সংযোজন করে তিনি বাংলা গানে বৈচিত্র্যের সঞ্চার করেছেন। অতুল প্রসাদের মামাতো বোন সাহানা দেবীর সম্পাদনায় ৭১টি গান স্বরলিপিসহ কাকলি (১৯৩০) নামে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়। তাঁর অপর গানগুলিও গীতিপুঞ্জ এবং কয়েকটি গান নামে দুটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়। ১৯২২-২৩ সালের দিকে কলকাতা থেকে প্রথম অতুল প্রসাদের গানের রেকর্ড বের হয় সাহানা দেবী ও হরেন চট্রোপাধ্যায়ের কণ্ঠে।
ডেইলি বাংলাদেশ/জেডএম