হেমনগর রেলস্টেশনে মাদকের আখড়া
প্রকাশিত: ১৫:১০ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ আপডেট: ১৫:৩৬ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
দিনের বেলায় কৃষি পণ্য মাড়াই আর রাতের বেলায় মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু- জামালপুর রেল লাইনের টাঙ্গাইলের হেমনগর রেলস্টেশন।
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অফিস কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল। গত ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-জামালপর নতুন দুটি ট্রেন উদ্বোধন করলেও এর সুফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
সরেজমিনে জানা যায়, যমুনা সার সরবরাহসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষে ১৯৯৬ সালের শেষদিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামালপুরের এক জনসভায় তারাকান্দী-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত মিটারগেজ লিঙ্ক রেলপথ স্থাপনের ঘোষণা দেন।
পরে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে ২০০০ সালে এর কাজ শুরু হয়। ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১১ সালে রেললাইনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০১২ সালের ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেন যাত্রার মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন।
৪২ কিলোমিটার এ রেললাইনে ৫২টি ব্রিজ-কালভার্ট ও ৪টি রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের হেমনগর রেলস্টেশনটি অন্যতম। উদ্বোধনের আড়াই থেকে তিন বছর স্টেশনটি চালু থাকলেও বিগত পাঁচ বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে।
হাবিবুর রহমান নামে একজন গেটম্যান ছাড়া নেই কোনো জনবল। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অফিস কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল দিনের বেলায় কৃষি পণ্য মাড়াই আর রাতের বেলায় ভ্রাম্যমাণ পতিতা ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। স্টেশনটিতে নেই কোনো যাত্রী ছাউনি। একমাত্র টয়লেট থাকলেও নেই কোনো পানি সরবরাহের ব্যবস্থা।
আবাসিক ভবনে ময়লা আবর্জনা-আগাছা বিদ্যমান থাকায় যেখানে সেখানে রাতের বেলায় মলমূত্র ত্যাগ করছে। লাইটিং না থাকায় রাতেরবেলা ভূতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে। মাদকাসক্ত ও জুয়াড়ুরা নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে এ রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম ও আশপাশের এলাকা।
পরিত্যক্ত ভবন ও আশে-পাশের ঝোপঝাড়েও ভ্রাম্যমাণ পতিতাবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অফিস কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল। দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলছে জানালার কাঁচ।
এদিকে এ রেললাইন দিয়ে চলাচল করা বাহাদুরাবাদ, ধলেশ্বরী, লোকাল ট্রেনসহ গত ২৬ জানুয়ারি যোগ হয়েছে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন। যা প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। জনবলের অভাবে পুরো স্টেশন এখন অরক্ষিত, অভিভাবকহীন।
টিকেট মাস্টার না থাকায় যাত্রীরা এখান থেকে কোটায় অথবা স্ট্যান্ডিং টিকেট সংগ্রহ করতে পারছে না।
কেউ কেউ ১০ কিলো দূরে ভূঞাপুর অথবা ১৫ কিলো দূরের সরিষাবাড়ী স্টেশন থেকে টিকেট সংগ্রহ করেন। জনবল সংকটের অজুহাতে হেমনগর রেলওয়ে স্টেশন পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রাখায় হাজার হাজার যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে এটি মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। যেন দেখার কেউ নেই। টিকিট না পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রীরা। স্টেশনটি দ্রুত চালু করে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করার দাবি এলাবাসীর।
পাঁচ বছর ধরে স্টেশন বন্ধ ও মাদকের কথা স্বীকার করে স্টেশনের একমাত্র কর্মচারী গেটম্যান হাবিবুর রহমান জানান, এলাকার লোকজনই সব কিছু করে। এতে আমার কিছু করার নেই। কিছু বললে আমার উপর হুমকি আসে। চালু থাকলে এমনটি হতো না। দ্রুত স্টেশনটি চালু হওয়া দরকার।
লেখক ও গবেষক মামুন তরফদার জানান, আবাদযোগ্য ভূমি চাষাবাদের অভাবে যেমন পরিত্যক্ত হয়ে যায় এ স্টেশনের অবস্থাও তাই হয়েছে। মাদকসবী আর ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের আড্ডায় রুপান্তর হয়েছে। স্টেশনটি চালু হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মাদকসেবীদের আঁখড়া ধ্বংস হবে। প্রাণ ফিরে পাবে স্টেশনটি। কমবে ভোগান্তি। নিশ্চিত হবে যাত্রী সেবার মান।
টাঙ্গাইল জেলা রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, জনবল সংকটসহ বেশ কিছু ত্রুটির কারণে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় নানান ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। স্টেশনটি চালুর চেষ্টা চলছে। চালু হলে সব সমস্যার সমাধান হবে।
মাদকসেবীদের আঁখড়ার কথা স্বীকার করে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাসুম আলী খান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত স্টেশনটি চালু করা হবে। যাতে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর হয়। প্রাণ ফিরে পায় স্টেশনটি।
ডেইলি বাংলাদেশ/এমকে