সংরক্ষণ সংকটে শুঁটকি, শত কোটি টাকা লোকসানের ঝুঁকি
প্রকাশিত: ১৩:২৮ ২ ডিসেম্বর ২০১৯

ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত দেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলে প্রতি বছর প্রায় কয়েকশ কোটি টাকার শুটকি উৎপাদন হয়। কিন্তু উৎপাদিত শুটকি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর এই অঞ্চলে কয়েকশ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়। ফলে প্রতিবছর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় মৎস্যজীবি ও শুটকি উৎপাদনকারীরা।
নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলা, পাবনার চাটমোহর, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়ায় বৃহৎ জলাভূমি অঞ্চল নিয়ে চলনবিল। ভৌগোলিক কারণেই এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে মৎস্যজীবীদের বসতি গড়ে উঠেছে। তারা সারাবছর এসব এলাকার জলাশয় থেকে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।
মৎস্যজীবি ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় এ অঞ্চলের মৎস্য রক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ও জলাশয় প্রভাবশালী ও মৎস্যজীবীদের দখলে চলে গেছে।
চলনবিলে এখন চাহিদার তুলনায় অনেক কম মাছ উৎপাদন হলেও প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্ধৃত্ত মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। পুটি, টেংরা, কাটা বাতাসি ও চাঁদা মাছ এ ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হয়। এজন্য এ অঞ্চলের বড় জলাশয়ের ধারে গড়ে উঠেছে শুঁটকি তৈরির শতাধিক চাতাল।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানায়, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে এ শুঁটকি মাছ খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। স্বাদে ও পুষ্টিমানের গুণ বিচারে বাজারে শুটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্ষা ও শীত মৌসুমে শুঁটকির উৎপাদন বেশি হয়। এ সময় বাজারে প্রচুর পরিমাণে শুঁটকি মাছ সরবরাহ হওয়ায় দাম কম থাকে। মাছ সংরক্ষণ করা হলে বছরের অন্যান্য সময় এর চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়ে যায়।
কিন্তু সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উন্নত ব্যবস্থা এ অঞ্চলের কোথাও না থাকায় পুরনো পদ্ধতিতে খোলা মাঠে রোদে শুকিয়ে এরা কিছুটা সংরক্ষণ করতে পারলেও বেশির ভাগ শুঁটকি পচে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু যদি এ অঞ্চলে উৎপাদিত এই শুঁটকি মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা সরকারিভাবে থাকতো তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হতো।
চলনবিলের মহিষলুটি এলাকার মৎস্যজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, প্রতিবছর অনেক টাকার শুঁটকি নষ্ট হয়। এ কারণে তারা প্রতিবছর বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ অঞ্চলের শুঁটকি সংরক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুটকি তেমন বেশি নষ্ট হয় না। উৎপাদনের পরপরই এ অঞ্চল থেকে শুটকি রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। মৎস্যজীবী ও শুটকি উৎপাদনকারীদের ঘরে শুটকি বেশি দিন রাখা হয় না। তৈরির সময় লবণ ছাড়া অন্য কোনো মেডিসিনও মেশানো হয় না ফলে এ শুটকি স্বাস্থ্যসম্মত।
ডেইলি বাংলাদেশ/জেএস